প্রবাসীর টাকা মেরে দিয়েছেন গফরগাঁও কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তারা

আতাউর রহমান মিন্টু, গফরগাঁও (ময়মনসিংহ): বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক গফরগাঁও শাখায় এক প্রবাসীর সঞ্চয়ী হিসাব থেকে চেক জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রায় নয় মাস ধরে বিদেশে অবস্থানরত ওই অনাবাসী গ্রাহকের হিসাবের বিপরীতে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের একটি চক্র নিজেরাই চেক বই ইস্যু এবং চেকে জাল স্বাক্ষর করে টাকা উঠিয়ে নেন। জালিয়াতিতে ব্যাংক কর্মকর্তারা জড়িয়ে পড়ায় আতঙ্কে রয়েছেন উপজেলার বিভিন্ন ব্যাংকের প্রায় লক্ষাধিক গ্রাহক।

জানা গেছে, গফরগাঁও উপজেলার উস্থি ইউনিয়নের বড়বাড়ি গ্রামের মৃত আলাউদ্দিনের ছেলে ক্ষুদ্র কাঁচামাল ব্যবসায়ী মো. খায়রুল ইসলাম ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর কৃষি ব্যাংক গফরগাঁও শাখায় একটি সঞ্চয়ী হিসাব খোলেন। হিসাব নং ৯৬৫১। ২৯ ডিসেম্বর তিনি শ্রমিকের কাজ নিয়ে ওমান চলে যান। হিসাবের নিরাপত্তার স্বার্থে খায়রুল ইসলাম ব্যাংক থেকে কোনো চেক বই উঠাননি।

খায়রুল ইসলাম গত ৩১ মার্চ তার সঞ্চয়ী হিসাবে প্রথমে ২০ হাজার টাকা রেমিট্যান্স পাঠান। সর্বশেষ ২৩ জুলাইসহ পাঁচটি কিস্তিতে সর্বমোট এক লাখ টাকা রেমিট্যান্স তার সঞ্চয়ী এ্যাকাউন্টে জমা হয়। আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে খায়রুল ইসলামের মা রত্না খাতুন ছেলের এ্যাকাউন্টে কত টাকা জমা হয়েছে জানার জন্য ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকের সাথে যোগাযোগ করেন। শাখা ব্যবস্থাপক জানান, এক লাখ টাকা জমা হয়েছিল, জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে দুটি কিস্তিতে ৮০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। রত্না খাতুনকে জানানো হয়, তার ছেলের এ্যাকাউন্টে বর্তমানে ২০ হাজার ৮৮৯ টাকা জমা আছে। এ ঘটনায় হতবিহ্বল রত্না তার ছেলের কষ্টে উপার্জিত টাকা উদ্ধারের জন্য জালিয়াতির বিষয়টি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের গোচরে আনেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এই শাখার কর্মকর্তাদের একটি চক্র খায়রুল ইসলামের ৯৬৫১ নং সঞ্চয়ী হিসাবের বিপরীতে চেক বই ইস্যুর জন্য নিজেরাই আবেদন করে গত ২৬ জুলাই চেক বই উত্তোলন করে। এ তারিখেই এ এ্যাকাউন্ট থেকে স্বাক্ষর জাল করে ৭৫ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়। ৩০ জুলাই উত্তোলন করে আরো ৫ হাজার টাকা। উত্তোলনের সময় ব্যবহৃত চেকে লেখাগুলোও এই শাখায় কর্মরত একজন ব্যাংক কর্মকর্তার।

এদিকে এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরও উপজেলার বিভিন্ন ব্যাংকের শাখার প্রায় লক্ষাধিক গ্রাহকের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পৌর শহরের স্টেশন রোডের ব্যবসায়ী মোতাহার হোসেন বলেন, এ রকম জালিয়াতির ঘটনায় যদি ব্যাংকের কর্মকর্তারা জড়িত থাকে অব্যশই তা আতঙ্কের।

খায়রুলের মা রত্না খাতুন জানান, কষ্টের জমানো টাকা ফেরত পেতে বিদেশে তার ছেলে অস্থির। প্রতিদিনই ফোন করে খোঁজখবর নিচ্ছে। ব্যাংকের লোকজন ১০ দিন ধরে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বললেও ফেরত দিচ্ছে না।

ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক আব্দুস ছালাম বলেন, ব্যাংকে কর্মরত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ‘খোয়া যাওয়া’ ৮০ হাজার টাকা আদায় করে এই গ্রাহকের হিসাবে জমা দেওয়ার জন্য ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার আব্দুজ আজিজকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। টাকা আদায়ের পর দোষীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।