শেরপুরে সংঘর্ষ ও হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার ৩, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেন হুইপ আতিক

হাকিম বাবুল, শেরপুর: জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে শেরপুরের হালগড়া গ্রামে  দুই পক্ষের সংঘর্ষে হতাহত, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় পৃথক দুই মামলায় তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

গ্রেফতাররা হলেন হালগড়া গ্রামের নজরুল ইসলাম (৩৫), ফটিয়ামারি গ্রামের হামিদুর রহমান (২২) ও আল ফাহাদ রিপন (২৩)। শনিবার বিকেলে তাদের আদালতে সোপর্দ করা হলে আদালত তাদের জেলে পাঠান।

সংঘর্ষের ঘটনা থামাতে গিয়ে কর্তব্যরত পুলিশের ওপর হামলা ও পুলিশকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় শেরপুর সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. নজরুল ইসলাম খান একটি মামলা করেছেন। মামলায় হালগড়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য রহিজ উদ্দিন, আব্দুর রফিক, শহরবানুসহ ৪৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ১৪০/১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

সংঘর্ষে নিহত আব্দুস সাত্তারের ভাই আব্দুল কাদের বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

সদর থানার ওসি মো. নজরুল ইসলাম জানান, গ্রেফতার নজরুল ইসলাম সাত্তার হত্যা মামলার আসামি, অপর দুজন পুলিশ অ্যাসল্ট মামলার আসামি।

ভাঙচুর করা একটি বাড়ি পরিদর্শন করছেন হুইপ।

হালগড়া গ্রামের একটি জমি নিয়ে মজু মিয়া ও তার ভাই কাদেরের সঙ্গে একই এলাকার রফিক মিয়া ও অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য রহিজ উদ্দিনের দ্বন্দ্ব চলছিল। বৃহস্পতিবার এ নিয়ে উভয়পক্ষের লোকজন রক্তক্ষয়ী সংর্ঘষে জড়িয়ে পড়েন। সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়।

গুরুতর আহত কাদেরের ভাই আব্দুস সাত্তার শুক্রবার বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। তার মৃত্যুর খবরে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। উভয়পক্ষ দেশীয় ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে গ্রামের দুই দিকে অবস্থান নেয়। খবর পেয়ে পুলিশ হালগড়া গ্রামে অবস্থান নেয়। সেসময় রহিজউদ্দিন-রফিকদের ঘরবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে ৩৫টি বাড়িঘর ভস্মীভূত হয়।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর দাবি- পুলিশের উপস্থিতিতে মজু-কাদেরের লোকজন ঘরবাড়িতে আগুন দেয়। তবে পুলিশ এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে রহিজউদ্দিনের লোকজন নিজেদের বাড়িঘর ভাঙচুর করে তাতে অগ্নিসংযোগ করলে সেই আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এতে ২০-২৫টি বাড়ি-ঘর ভস্মীভূত হয়। রহিজের লোকজন গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। আগুন দেওয়ার সময় এক মহিলাকে পুলিশ ধরে ফেললে পুলিশের ওপর হামলা করে তাকে ছাড়িয়ে নেয় রহিজ উদ্দিনের লোকজন। এ ঘটনায় সাইফুল ইসলাম নামে এক পুলিশ কনস্টেবল আহত হয়। খবর পেয়ে শেরপুর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

জাতীয় সংসদের হুইপ আতিউর রহমান আতিক শনিবার দুপুরে হালগড়া পরিদর্শন করেছেন। হুইপ বিবদমান পক্ষদ্বয়কে সহনশীল ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতি পরিবারকে ২ বান্ডিল ঢেউটিন ও নগদ ৬ হাজার করে টাকাসহ খাদ্য-বস্ত্র ও জ্বালানি সহায়তা প্রদানের ঘোষণা দেন। এসময় সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুকতাদিরুল আহমেদ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেন, ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম মিজু, দলীয় নেতা এবং পুলিশ ও র‌্যাবের কর্মকর্তারা তার সাথে ছিলেন। এর আগে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ছানুয়ার হোসেন ছানু ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে ওইসব পরিবারকে সহায়তার আশ্বাস দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.