কুলাউড়ায় গাছ কাটা নিয়ে স্থানীয় খাসিয়া ও চা বাগান কর্তৃপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা

মৌলভীবাজার থেকে আজিজুল ইসলাম: মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ঝিমাই পানপুঞ্জি এলাকায় দুই হাজারের বেশি গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঝিমাই চা বাগান কর্তৃপক্ষ। এনিয়ে খাসিয়াদের মধ্যে আতংকের সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল শুক্রবার (৩০ জানুয়ারি) গাছ কাটার সিদ্ধান্ত বন্ধের দাবিতে কুলাউড়ার খাসিয়ারা এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।

আদিবাসীদের সূত্রে জানা গেছে, ঝিমাই পুঞ্জির সঙ্গে পার্শ্ববর্তী ঝিমাই চা-বাগানের দীর্ঘদিন ধরে ভূমি নিয়ে বিরোধ চলছে। সাত-আট দিন আগে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে বাগানের লোকজন পুঞ্জির জুমে প্রবেশ করে বেশ কিছু গাছ কাটার জন্য মার্কিং করে যান। গত বুধবার (২৮ জানুয়ারি) বাগানের লোকজন জুমে চৌকিদারের জন্য ঘর তৈরির চেষ্টা চালালে খাসিয়ারা বাধা দেয়। এ ঘটনায় উভয়পক্ষে উত্তেজনা দেখা দিলে কুলাউড়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

kulaura jhimai punji
কুলাউড়ার ঝিমাই পানপুঞ্জিতে চা বাগান কর্তৃপক্ষের পানগাছ কেটে ফেলার দৃশ্য

সরেজমিন ঝিমাই পানপুঞ্জিতে গেলে আদিবাসীরা অভিযোগ করেন, চা বাগানের লোকজন তাঁদের বেশ কিছু পানগাছ কেটে ফেলেন। জুমে গিয়ে কিছু কাটা পানগাছও পড়ে থাকতে দেখা গেছে। পুঞ্জির মন্ত্রী (হেডম্যান) রানা সুরং অভিযোগ করেন, বাগান কর্তৃপক্ষ জোর করে তাঁদের জুমের গাছ কেটে নিতে চাচ্ছে। গাছ না থাকলে জুমের পানচাষ সম্ভব হবে না। তাঁদের জীবিকা নষ্ট হয়ে যাবে। সে কারণে তারা উদ্বেগ উৎকন্ঠায় রয়েছেন।

এদিকে গতকাল শুক্রবার পানপুঞ্জি এলাকায় ঝিমাই চা বাগানের গাছ কাটা বন্ধের দাবিতে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে খাসিয়ারা। মানববন্ধন কর্মসূচিতে আদিবাসী সংগঠন কুবরাজ আন্তঃপুঞ্জির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রত্যুশ আশাক্রা, সেক্রেটারি ফ্লোরা বাবলি তালাং, ঝিমাই পানপুঞ্জির মন্ত্রী রানা সুরং প্রমুখ বক্তব্য দেন।

ঝিমাই চা-বাগানের ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন সরকার জানান, তাদের ইজারা নেয়া জায়গার পরিমাণ ৬৮৬ একর। এরমধ্যে মাত্র ২০০ একরে চা-গাছ রয়েছে। বাকি জায়গা খাসিয়াদের অবৈধ দখলে রয়েছে। চা-গাছ লাগানোর জন্য খাসিয়াদের দখলকৃত জায়গা থেকে ২০৯৬টি গাছ কাটতে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে। তাই, গাছ মার্কিং চলছে।

আদিবাসীদের সংগঠন ‘কুবরাজ’-এর সাধারণ সম্পাদক ফ্লোরা বাবলি তালাং জানান, ঝিমাই পুঞ্জির আদিবাসীরা কোনোভাবেই গাছ কাটতে দেবে না। গাছকে ঘিরেই তাঁদের জীবিকা। জীবিকা হারালে আদিবাসীদের বেঁচে থাকা কঠিন।
কুলাউড়ার রেঞ্জ কর্মকর্তা প্রভাত কুসুম আচার্য জানান, বাগান গাছ কাটার জন্য অনুমোদন পেয়েছে। রয়্যালটি আদায়ের পর গাছ কাটার অনুমতি দেয়া হবে।

কুলাউড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নাজমুল হাসান জানান, ঝিমাই পুঞ্জি ও চা-বাগানের বিরোধ মীমাংসার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে।