খুলনা থেকে সোহরাব হোসেন: খুলনার কয়রা উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের পাশ দিয়ে বাঁশের খুঁটির সঙ্গে কারেন্টজাল টানিয়ে মাইলের পর মাইল ঘিরে রাখা হয়েছে। প্রতিবেশ ও রক্ষিত এলাকা সংরক্ষণ, প্রাকৃতিক সম্পদ ও জীববৈচিত্রের উন্নত ব্যবস্থাপনা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর বহুমুখি জীবিকায়নের লক্ষে একটি বে-সরকারি সংস্থা ‘ক্রেল’ নামের এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা।

উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান অভিযোগ করেন, ইউনিয়নের বিভিন্ন নদীর চরের বেড়ি বাঁধে কারেন্ট জালের ঘেরা কেন দেওয়া হয়েছে জানা নেই। ফাঁকা চরে ঘেরা দেওয়ার উদ্দেশ্য কি সে সম্পর্কেও তাকে অবহিত করা হয়নি বলে জানান তিনি। একই অভিযোগ করেছেন উত্তর বেদকাশি ইউপি চেয়ারম্যান সরদার মতিয়ার রহমান। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের কথা বলে বাঁশের বেড়ায় কি উন্নয়ন হচ্ছে বুঝতে পারছি না। তারা আমাদের এ সম্পর্কে কিছু জানানোর প্রয়োজনও মনে করে না।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, জলবায়ু সহিষ্ণুতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার উন্নয়নে খুলনা, সিলেট, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় প্রায় তিনশ’ কোটি টাকা বায়ে ‘ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ইকোসিস্টেমস্ অ্যান্ড লাইভলিহুডস্’ সংক্ষেপে ক্রেল নামের এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে উইনরক ইন্টারন্যাশনাল এবং কয়েকটি সহযোগী সংস্থা। এর অংশ হিসেবে কয়রা উপজেলার মহারাজপুর, মহেশ্বরীপুর, কয়রা সদর, উত্তর বেদকাশি ও দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পটির অর্থায়নে রয়েছেন ইউএসএইড।
সুত্র অনুযায়ি চারটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ার কথা। তা হলো প্রাকৃতিক সম্পদ ও জীববৈচিত্রের উন্নত সুশাসন, প্রধান অংশভাগীদের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি, জলবায়ু সহিষ্ণু প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা, অভিযোজন পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শক্তিশালী করা এবং উন্নত পরিবেশবান্ধব ও জলবায়ু সহিষ্ণু জীবিকা। তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন অনেকটা খাতা কলমে সীমাবদ্ধ রয়েছে। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন ও সম্পৃক্ততার কোন প্রমান এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। কেবল মাইলের পর মাইল বাঁশের খুঁটি ও কারেন্ট জাল টানিয়ে রাখা হয়েছে মাত্র। তা অনেক স্থানেই ইতিমধ্যে নষ্ট হতে শুরু করেছে।
জানতে চাইলে প্রকল্পের স্থানীয় সাইট কর্মকর্তা বাবুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার বাঁধ সুরক্ষা এবং জনগণের বিকল্প জীবিকায়নের লক্ষ্যে ৮৫ হেক্টর নদীর চরে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে কারেন্ট জালের ঘেরা স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গাছের চারা রোপন করা হয়েছে। এসব রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের সমন্বয়ে কমিটি করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রকল্পটির আঞ্চলিক সমন্বয়কারি শেখ মোঃ জিয়াউল হক বলেন, পাঁচ বছর মেয়াদি এ প্রকল্প বাংলাদেশের চারটি জেলায় বাস্তবায়ন হচ্ছে। তার অংশ হিসাবে খুলনা জেলার দাকোপ ও কয়রা উপজেলায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তাবায়নের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও বনবিভাগের সহযোগিতা নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে কয়রা উপজেলায় কত টাকা বরাদ্দ রয়েছে তা জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করেন তিনি।
প্রকল্প সম্পর্কে কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শামীম হাসান বলেন, আমাকে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির উপদেষ্টা করা হয়েছে। সভায় প্রকল্পটির উদ্দেশ্য যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে সেভাবে বাস্তবায়ন হলে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকার উন্নয়নে যথেষ্ট ভুমিকা রাখতে পারে। তবে খাতা-কলমে উপস্থাপন এবং বাস্তবতায় এর মিল সম্পর্কে এখনো সুস্পষ্ট কোনো ধারণা তার নেই বলে জানান তিনি। এছাড়া এ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির উপদেষ্টা হিসাবে কয়রা উপজেলায় অর্থ বরাদ্দ সম্পর্কেও তিনি কিছুই জানাতে পারেননি।