বরিশাল থেকে এম.মিরাজ হোসাইন: টেন্ডার ছাড়াই ঝুঁকিপূর্ণ আখ্যায়িত করে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদীর ভূরঘাটা থেকে বরিশাল অংশের প্রায় ২২ কিলোমিটার মহাসড়কের ওপর ঝুলে থাকা গাছের ডালপালা কাটার নামে শত শত গাছের মূলঅংশ কেটে লুটপাট করা হচ্ছে। গত এক মাস থেকে প্রকাশ্যে লাখ লাখ টাকার সরকারি গাছ ও ডালপালা কেটে বরিশাল সওজ বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা ও নগরীর প্রভাবশালী কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরকারি গাছ কাটার বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করছেন সওজ বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বনবিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। স্থানীয় পরিবেশবিদরা জরুরি ভিত্তিতে মহাসড়কের গাছ নিধন বন্ধ করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন।
রবিবার দুপুরে সরেজমিন মহাসড়কের গৌরনদীর বেজহার আকন বাড়ির কাছে গিয়ে দেখা গেছে, সওজ বিভাগের দুইজন কার্যসহকারীর উপস্থিতিতে মহাসড়কের পাশের বিশাল আকৃতির রেইনট্রি, মেহগনিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছের ডালপালাসহ বিশাল আকৃতির মূল অংশ কাটা হচ্ছে। এ কাজে নিয়োজিত রয়েছেন ১০/১২ জন শ্রমিক। তারা প্রায় ৫/৭ ফুট গোলাকারের এসব ডালপালা কেটে বিভিন্ন আকারের সাইজ করে মিনি ট্রাকে বোঝাই করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই দুই কার্যসহকারী বলেন, আমরা স্যারের নির্দেশ পালন করছি। এর বেশি কিছু বলতে পারবোনা। ট্রাক চালক দেলোয়ার হেসেন জানান, গত ২২ দিন ধরে তারা দুটি মিনিট্রাকে করে বরিশাল আমতলায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের অফিসে গাছ পৌঁছে দিচ্ছেন। এ জন্য দৈনিক ৭ হাজার টাকা ভাড়ায় তারা গড়ে ৫ থেকে ৬ ট্রাক গাছ সেখানে পৌঁছে দিচ্ছেন। ভাড়ার টাকা সওজ এর কর্মকর্তারা পরিশোধ করছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বরিশাল সওজ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাখাওয়াত হোসেনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, ২৩নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি মো. তুহিনসহ নগরীর কয়েকজন সরকারি দলের নেতাকর্মীরা অফিস ম্যানেজ করে অর্ধেকভাগে গাছের ডাল-পালা কাটার দায়িত্ব নিয়েছেন। গাছ ও ডালপালা কাটার পর ছাত্রলীগ নেতারা অর্ধেক নিয়ে যাচ্ছেন। বাকি অর্ধেক যাচ্ছে সওজ এর বরিশালের আমতলা অফিসে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সওজ’র কর্মকর্তারা গাছের সিংহভাগ বিক্রি করে অল্প কিছু ডালপালা আমতলা অফিসের স্টকইয়ার্ডে স্তুপ করে রেখেছেন। মহাসড়কের ভূরঘাটা থেকে বরিশাল অংশের জাতীয় মহাসড়কের (এন-৮) বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উজিরপুরের সানুহার থেকে গৌরনদী ভূরঘাটা পর্যন্ত মহাসড়কের পাশ্ববর্তী স্থানের বিশাল আকৃতির মেহগনি, রেইনট্রি, চাম্বলসহ বিভিন্ন জাতের শত শত পুরানো গাছের বড় বড় ডালপালা ও গাছের মূলঅংশ কেটে সাবার করা হয়েছে। অসংখ্য গাছের মূল অংশ ও কান্ড কেটে ফেলার কারণে অচিরেই শুকিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে শত শত মূল্যবান গাছ। এক সপ্তাহ পূর্বে গৌরনদীর বাটাজোর এলাকায় এভাবে গাছ কাটা শুরু করলে স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বাঁধা প্রদান করেন। এ কারণে একদিনের জন্য গাছ কাটা বন্ধ থাকলেও রহস্যজনক কারনে পরেরদিন থেকে আবার গাছ কাটা শুরু হয়।
এ ব্যাপারে বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের ২৩নং ওয়ার্ডের সভাপতি মো. তুহিনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা শুধুমাত্র ঝুঁকিপূর্ণ ডাল কেটে পরিস্কার করছি। এতে গাছের কোন ক্ষতি হচ্ছেনা। তিনি কাটার জন্য অর্ধেক ডালপালা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি এ কাজের সাথে যুক্ত নই। তুহিন সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর অনুমতি নিয়ে মহাসড়কের ওপর ঝুলে থাকা গাছের ডাল কেটে পরিস্কার করছে। বরিশাল সওজ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাসেদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মহাসড়কের ওপর ঝুলে থাকা গাছের ডালপালা বড় হলে রাস্তার ওপর পড়ে যানমালের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। এটা ভেবে ওইসব ডালপালা কাটার জন্য নির্বাহী প্রকৌশলীর অনুমতি নিয়েই আমরা ডালপালা কাটা শুরু করেছি। সওজ’র কতিপয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গাছ লুটের অভিযোগ তিনি পুরোপুরি অস্বীকার করেন।