খালিয়াজুরী (নেত্রকোনা) থেকে মহসিন মিয়া: নেত্রকোনার খালিয়াজুরীতে ফসল রক্ষা বাঁধ সংস্কার প্রকল্পের কাজ অনেক স্থানে নির্দিষ্ট সময়ে শুরু না হওয়ায় বর্ষায় পানি আসার আগে কাজ শেষ করা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আবার এসব প্রকল্পের বরাদ্দ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে। প্রকল্পগুলোর কাজ যথা সময়ে শেষ না হলে অকাল বন্যায় এবারও ফসল তলিয়ে যেতে পারে বলে আশংকা করছেন কৃষকরা।
হওর পাড়ের খালিয়াজুরী উপজেলায় বছরে একমাত্র ফসল হলো বোরো। এ ফসল প্রতি বছর আগাম বন্যায় পানির নীচে তলিয়ে যায়। তাই ফসল রক্ষায় প্রতি বছরের ন্যায় এবারও খালিয়াজুরীতে বাঁধ সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের সমন্বয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) ও ঠিকাদারের মাধ্যমে এসব প্রকল্প ১৫ ডিসেম্বর শুরু ও ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়ার কথা। অথচ, কিছু এলাকায় কাজ শুরু হলেও অনেক স্থানে এখনও কাজ শুরুই হয়নি। কাজ কবে নাগাদ শুরু হবে তাও বলতে পারছেনা সংশ্লিস্ট দপ্তরগুলো। এলাকার একাধিক কৃষক তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে জানান, সংশ্লিষ্ট বিভাগ এখানে নানান অজুহাতে কাজ শুরু করে বর্ষা আসার আগ মূহুর্তে। এসময় একদিকে, তরিঘরি করে কাজ শুরু হয়, অপরদিকে, খালগুলোতে পানি ঢুকে যায়। ফলে এসব খালে কি পরিমান মাটি কাটা হয়েছে তার কোনো হিসাব থাকে না। এতে কাজ না করেই সুবিধা অনুযায়ী প্রকল্পের টাকা লুটপাট করা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলায় বিস্তৃর্ণ এলাকার ফসল রক্ষার জন্য রসুলপুর বাঁধ সংস্কার কাজ অত্যন্ত জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ হলেও এ বাঁধের কাজ এখনো শুরু হয়নি। বাঁধের কোথাও গর্ত এবং কোথাও ভগ্নদশা রয়েছে। মেরামত কাজের কোনো চিহ্ন চোখে পড়েনি। এমন দশা দেখা গেছে, চৌতারার বাঁধ, চতিয়ার বাঁধ, বাগানি থেকে ধৌলং বাঁধসহ আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁধে।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, হাওরে বেশ কিছু বাঁধ ঝুকিপূর্ণ রয়েছে। খালিয়াজুরীর বিভিন্ন স্থানে বাঁধ সংস্কারের জন্য এবার ৪টি পোল্ডারে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রায় ২ কোটি টাকা। সংস্কার কাজের জন্য খালিয়াজুরীতে ১২টি পিআইসি গঠন করা হয়েছে। তাছাড়া, টেন্ডার দেয়া হয়েছে ৪টি প্রকল্পের। এর মধ্যে নাওটানা উপ-প্রকল্প, বিলবিল্লা, ফরিদপুরের গোনা, লেপসিয়ার বাঁধ, পুইট্টাখালি, কীর্তনখলা, পাইয়ার বাঁধ, ছতিয়া বাঁধ, খরকরিয়াসহ অসংখ্য বাঁধ রয়েছে।
এসব বাঁধের কোথায়ও কোথায়ও সংস্কার কাজ শুরু হলেও তা চলছে ধীর গতিতে। কাজের মান অসন্তোষজনক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইউপি চেয়ারম্যান জানান, পাউবো’র প্রকল্প কাজে রয়েছে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি। নেত্রকোনা পাউবো কর্তৃপক্ষ প্রতিটি বাঁধের গুরুত্ব অনুযায়ী প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না দিয়ে তাদের সুবিধা মতো মনগড়াভাবে বাধের বরাদ্দ বন্টন করেন। উদাহরণ হিসেবে তিনি জানান, খালিয়াজুরীর কীর্তনখোলা বাঁধ চতিয়ার বাঁধের চেয়ে গভীরতা ও দৈর্ঘ্যে অনেকাংশে বড় হলেও কীর্তনখোলা বাঁধে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাত্র ১০ লক্ষ টাকা। এদিকে, চতিয়ার বাঁধে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫০ লক্ষ টাকা।
খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বদরুল হাসান লিটন কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, উপজেলার প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর জমির ফসল রক্ষা বাঁধের বেশির ভাগ কাজ টেন্ডারের মাধ্যমে হয়। ঠিকাদাররা বর্ষা আসার আগ মূহুর্তে কাজ শুরু করে। এতে করে যথাসময়ে কাজ হয়না এবং কাজের মানও ভাল করা যায় না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি দিয়ে পিআইসি’র মাধ্যমে কাজ করলে সঠিক সময়ে মানসম্মত কাজ করানোর সম্ভাবনা থাকে। কাজ ঠিকমত না হলে তাদেরকে জবাবদিহি করতে হয়। এ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানানোর পরও কোনো কাজ হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও টেন্ডারের মাধ্যমে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ রয়েছে তা এখনো শুরুই হয়নি।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খুশি মোহন বলেন, পাউবো’র কাজে কোন অনিয়ম ও দুনীতি নেই। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা পিআইসি সঠিক সময়ে না দেয়ায় কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। বর্ষার পানি আসার আগেই সংস্কার কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।