হাকিম বাবুল, শেরপুর: গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেছেন, ৪৪ বছর পেরিয়ে গেলেও সোহাগপুরের বিধবারা মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পায়নি। এ লজ্জা রাষ্ট্রের। স্বজনহারা ও সম্ভ্রমহারা সকল নারীদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিয়ে রাষ্ট্রকে তাঁদের দায়িত্ব নেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধের দায়ে সরকার ঘাতক কাদের মোল্লা ও কামারুজ্জামানের বিচার করে ফাঁসি কার্যকর করেছে। এজন্য জাতি সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ।
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সোহাগপুর বিধবাপল্লীতে বিধবাদের বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাতে এসে মঙ্গলবার বিকেলে কাকরকান্দি মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চে এক বিশাল সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংক, বীমা, গণমাধ্যম ও এনজিওদেরও তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এর আগে দুপুরে ইমরান এইচ সরকারসহ গণজাগরণ মঞ্চের শতাধিক কর্মী সোহাগপুর বিধবাপল্লীতে হাজির হয়ে ১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই নিহত শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পমাল্য অর্পণ করেন। এসময় শেরপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতৃবৃন্দ, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় শহীদ পরিবার কল্যাণ সমিতির নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
পরে বিধবাদের সাথে নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা। এসময় তাদের দেখে বুকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন বিধবারা। তাঁদের কান্নায় উপস্থিত অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। পরে গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে ডা. ইমরান এইচ সরকার, জীবনানন্দ জয়ন্ত, সবাক পাখি, শেখ রুদ্র শাম্মি হক, শিবলী হাসান বিধবাদের ফুলের তোড়া, কাপড়-চোপড় ও উপহার সামগ্রী দিয়ে সম্মানিত করেন। এসময় জেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আলহাজ দুলাল মিয়া ৩২ বিধবার হাতে নববর্ষের বস্ত্র কেনার জন্য এক হাজার টাকা করে ৩২ হাজার টাকা তুলে দেন। দুপুরে গণজাগরণ মঞ্চের নেতৃবৃন্দ বিধবাদের নিয়ে সোহাগপুর স্মৃতিস্তম্ভ এলাকায় পান্তাভাত খান। এসময় বিধবারা ইমরান এইচ সরকারের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করার দাবি জানান।
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী কাকরকান্দি ইউনিয়নের সোহাগপুরে ১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই আলবদর কমান্ডার কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে ও পরিকল্পনায় স্থানীয় আলবদর-রাজাকারদের সহায়তায় পাকহানাদার বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ১৮৭ জন পুরুষ মানুষকে হত্যা করে এবং নারীদের ওপর নির্যাতন চালায়। সেই থেকে সোহাগপুর গ্রামটির নাম পাল্টে হয়ে যায় ‘বিধবপল্লী’। ১১ এপ্রিল মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দণ্ড পাওয়া কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর হয়।