রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প পরিদর্শনে রাশিয়ান প্রতিনিধিদল

ঈশ্বরদী (পাবনা)  থেকে স্বপন কুমার কুন্ডু: রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাশিয়ান ফেডারেশনের এ্যাটমষ্ট্রয় এক্সপোর্টের প্রেসিডেন্ট নিমারেনকো ভ্যালোরী। রাশিয়ান সরকারের তত্ত্বাবধানে বিশ্বের সকল আণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা এ্যাটমষ্ট্রয় এক্সপোর্টের উচ্চ পর্যায়ের এই প্রতিনিধিদল সোমবার সকালে পাবনার ঈশ্বরদীতে রূপপুর প্রকল্পের সামগ্রিক কার্যক্রমের খুঁটিনাটি পরিদর্শন এবং কর্মরত রাশিয়ান এবং বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় করেন।

ishwardi (1) 20,4,15
রাশিয়ান সংস্থা এ্যাটমষ্ট্রয় এক্সপোর্টের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল রূপপুর প্রকল্পের সামগ্রিক কার্যক্রম পরিদর্শন করেন

এ্যাটমষ্ট্রয় এক্সপোর্টের প্রেসিডেন্ট নিমারেনকো ভ্যালোরী বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরের সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বোচ্চ নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের নিকট আবেদন জানালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট তাঁকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেন। সেই নিশ্চয়তা, ফুকুসিমার অভিজ্ঞতা এবং পৃথিবীতে সংঘঠিত সকল প্রকার দুর্ঘটনার বিষয়গুলো মাথায় রেখে এই প্রকল্পের জন্য সর্বাধুনিক নিউক্লিয়ার প্লান্টের ডিজাইন করা হয়েছে। এই ডিজাইনে দুর্ঘটনা ঘটার কোন আশংকা নেই। এটি বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি বলে তিনি জানান।

প্রকল্পের কাজের অগ্রগতির বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন, পরমাণু রেডিয়েশন লিক করে যাতে বাইরে না আসে সেজন্য ডাবল লেয়ার তৈরি করা হবে। এছাড়াও থাকবে বিশ্বের সর্বাধুনিক কোর ক্যাচার। রূপপুর প্রকল্প সর্বোচ্চ ৯ মাত্রার ভূমিকম্প সহনশীল। বিগত ও আগামী একশ বছরের ভূমিকম্প ও বন্যার বিষয় নিয়ে শুরু থেকেই একদল রাশিয়ান বিজ্ঞানী এখানে গবেষণা করছেন। যা সাথে সাথে রাশিয়াতেও গবেষণা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ টিমের নেতৃত্বদানকারী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রবীন্দ্র নাথ সরকার জানান, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তাঁর মন্ত্রণালয় এবং প্রকল্পের সাথে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরলসভাবে এই প্রকল্পে কাজ করছেন। নিউক্লিয়ার প্লান্টের সরঞ্জামাদি পরিবহন ও হ্যান্ডেলিং-এ বাংলাদেশের কোনো অভিজ্ঞতা নেই, তাহলে এর নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত করা হবে, এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, আর্ন্তজাতিক আইন অনুযায়ী নিউক্লিয়ার প্লান্টের সরঞ্জামাদি সুবিধাভোগী দেশের পরিবহনের নিয়ম রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের এই বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞতা না থাকায় ঝুঁকি ও নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে ইতিমধ্যেই রাশিয়ান কর্তৃপক্ষের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলে তারা পরিবহনের দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানিয়েছেন।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ডঃ শওকত আকবর প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি প্রসংগে বলেন, টাইম-লাইন অনুযায়ী সকল কাজ সম্পন্ন হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে  নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ২য় চুক্তির কাজ পুর্ণোদ্যমে চলার পাশাপাশি গত বছরের অক্টোবর হতে ৩য় চুক্তির কাজও শুরু হয়েছে। ২০১৬ সালের অক্টোবরের মধ্যে কন্সট্রাকশন লাইসেন্স পাওয়ার পর মূল নির্মাণ কাজ শুরু হবে। এভাবে কাজ চললে ২০২১ সালের মধ্যে জাতীয় গ্রীডে ২০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা করেন।

এ সময় এ্যাটমষ্ট্রয় এক্সপোর্টের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট লয়েল ম্যাক্সিম, রাশিয়ান রাষ্ট্রদূত আলেকজেন্ডার এ নিকোলাভসহ রাশিয়া সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানী উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের পক্ষে আরো ছিলেন, এ্যাটোমিক এনার্জি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম, কমিশনের সদস্য (পরিকল্পনা) আলী জুলকার নাইন, ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার রফিকুল ইসলাম সেলিম, প্রকল্পের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ কে এম রুহুল কুদ্দুস প্রমুখ।