‘ওপরের খরচের’ দোহাই দিয়ে রাজনগরে পর্চা বিতরণে অতিরিক্ত টাকা আদায়, কমিশনারের সতর্কতায়ও বন্ধ হয়নি

আজিজুল ইসলাম, মৌলভীবাজার: রাজনগর উপজেলায় সেটেলমেন্ট অফিসের কর্মীদের বিরুদ্ধে জমির পর্চা তুলতে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী পর্চাপ্রতি ৬০ টাকা ও একটি ম্যাপ ৩৫০ টাকায় বিক্রি করার কথা থাকলেও সেটেলমেন্ট অফিসে দ্বিগুণ টাকা নেয়া হচ্ছে। সহকারী কমিশনার (ভুমি) এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করলেও কোনো কাজ হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ এপ্রিল থেকে উপজেলার মশাজান, মনসুরনগর, দক্ষিণভাগ ও বাহাদুরগঞ্জ মৌজার মাঠ পর্চা বিতরণ শুরু হয়েছে। এসব মৌজায় আট হাজারেরও বেশি খতিয়ান রয়েছে।

সোমবার দুপুরে উপজেলা পরিষদে অবস্থিত সেটেলমেন্ট গিয়ে দেখা যায়, পর্চা বিতরণের কক্ষ ভেতর থেকে আটকানো। জানালার সামনে মাঠ পর্চা হাতে ভীড় করছেন জমির মালিকরা। ভেতর থেকে পর্চা বিতরণ করছেন ডেপুটেশনে শ্রীমঙ্গল থেকে রাজনগরে আসা পেশকার আবদুল মালিক।

জমির পর্চা নিতে আসা তারাপাশা গ্রামের প্রদ্যুন্ন মিত্র (৫০) জানান, ১০০ টাকা করে ৩০০ টাকা দিয়ে তিনটি পর্চা নিয়েছেন মশাজান মৌজার। একটি ম্যাপ নেয়ার জন্য পেশকারের হাতে ৪০০ টাকা দিলেও পেশকার তা ফেরত দিয়ে ৫০০ টাকা চান। পরে তিনি ৫০০ টাকা দিয়েই একটি ম্যাপ সংগ্রহ করেন। একই মৌজার পর্চা নিতে আসা আয়লা বিবি (৪৫) জানান, অনেক সময় লাইনে দাঁড়াইছি। ২০০ টাকা দিয়ে দুটা পর্চা নিছি। মনসুরনগর মৌজার পর্চা নিতে আসা ফরজান মিয়া (৫০) ৪৮টি পর্চার মধ্যে মাত্র চারটি নিতে পেরেছেন। তাও ৪০০ টাকা দিয়ে। পর্চা তিনে আসা খয়রুন নেছা (৪২) জানান, ৫০০ টাকা দিয়ে মশাজান মৌজার পাঁচটি পর্চা নিছি। এক টাকা কম হলে পর্চা দেন না। দক্ষিণভাগ মৌজার পর্চা নিতে আসা খলাগ্রামের বাবলা দে (৪০) জানান, দুটি পর্চা নিছি ২০০ টাকা দিয়ে।

এদিকে পর্চা ও ম্যাপ বিক্রিতে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের জন্য জমির মালিক ও বিতরকের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিতরণকারীদের সতর্ক করে অতিরিক্ত টাকা না নেয়ার জন্য বলেন। কিন্তু এর একদিন পরেই আবারও ওই কার্যালয়ের কর্মীরা অতিরিক্ত টাকা আদায় শুরু করেন।

এ ব্যাপারে পেশকার আবদুল মালিক অতিরিক্ত টাকা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমাদের ‘ওপরে’ কিছু খরচ রয়েছে। তাই কিছু বেশি নিতে হচ্ছে। তবে যারা খুশি হয়ে দিচ্ছেন তাদেরটাই নিচ্ছি। তবে তিনি এ ব্যাপারে সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেন, আপনার সঙ্গে পরে দেখা করবো।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিন্টু চৌধুরী জানান, অতিরিক্ত টাকা আদায়ের কারণে আমি তাদের একবার সতর্ক করে দিয়েছিলাম। এরপরও তারা নিচ্ছে।