হাকালুকি: পরিযায়ী পাখিদের নির্ভয় আশ্রম

প্রতিবছর মে মাসের ৯ তারিখ পালিত হয় বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস। হাওরতীরের জেলাশহর মৌলভীবাজারেও পালিত হচ্ছে দিবসটি। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় দিবসটি পালনের উদ্যোগ নিয়েছে মৌলভীবাজারের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ। মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মিলনায়তনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। হাকালুকি হাওরের পরিযায়ী পাখি নিয়ে লিখেছেন আজিজুল ইসলাম

এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকি দেশের পরিযায়ী পাখির অন্যতম আবাসস্থল। প্রতিবছর এখানে বহু পরিযায়ী পাখির অাগমন ঘটে। এখানে দেখা মেলে বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির পাখির।

Baer's_Pochard_1
হাকালুকির বিরল অতিথি বেয়ার’স পোচার্ড।

দেশে যেসব স্থানে অতিথি পাখি বা পরিযায়ী পাখির সমাগম ঘটে তার মধ্যে হাকালুকি হাওর অন্যতম। পরিবেশ অধিদপ্তরের আওতাধীন এ হাওরে ২০০৪ সাল থেকে পাখি শুমারি শুরু হয়। শুধুমাত্র ২০১২ সাল বাদে প্রতিবছরই পাখি শুমারি হয়। দেশের খ্যাতিমান পাখি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশের বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হকের নেতৃত্বে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সদস্য ও দেশী-বিদেশী পাখি বিশেষজ্ঞরা শুমারিতে অংশ নেন।

হাওর এলাকায় ১১২ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি এবং ৩০৫ প্রজাতির পাখি বিচরণ করে। কিন্তু প্রতিবছর শুমারিশেষে পাখি বিশেষজ্ঞদের দেয়া তথ্যমতে প্রায় প্রতিবছর হাকালুকি হাওরে ৬০ থেকে ৬৫ প্রজাতির পাখির সন্ধান পাওয়া যায়। সংখ্যায় সেগুলো ২০ থেকে ৩০ হাজার। তাছাড়া বিলুপ্তপ্রায় ও বিরল প্রজাতির পাখিরও দেখা মেলে এই হাওরে।

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের তথ্যমতে, ২০০৯ সালের মার্চ মাসে প্রথম দফায় ১৬টি পাখির গায়ে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার এবং ৩৪টি পাখির পায়ে রিং লাগানো হয়। চলতি বছর দ্বিতীয় দফায় গত ১৮ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি হাকালুকি হাওরে অতিথি পাখির পায়ে রিং লাগানো হয়। রিং লাগানো কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সদস্যরা অতিবিরল প্রজাতির কিছু পাখির সন্ধান পেয়েছেন। এ তালিকায় রয়েছে পাতারি ফুটকি, তিলা ঝাড়ফুটকি, পালাসি ফড়িংফুটকি, বৈকাল ঝাড়ফুটকি এবং লালাচাঁদি ফুটকি।

তাছাড়া পাখি শুমারিতে যেসব বিলুপ্তপ্রায় পাখির সন্ধান মিলেছে সেগুলো হলো বেয়ারর্স পোচার্ড (বেয়ারের ভূতিহাঁস), ব্ল্যাক হেডেড আইবিশ (কালো মাথা কাস্তেচড়া) গ্লোসি আইবিশ (খয়ারে মাথা কাস্তেচড়া), লেজার হোয়াইট ফ্রন্টেড গুজ (ধলাকপাল রাজহাঁস) উল্লেখযোগ্য।

সরকার ২০১০ সালে প্রথম দফায় পাঁচটি এবং ২০১১ সালে দ্বিতীয় দফায় ১২টি বিলকে অভয়াশ্রম ঘোষণা করে। ফলে হাকালুকি হাওরে আগামীতে আরও বেশি পরিযায়ী পাখির সমাগম ঘটবে বলে হাওরে কর্মরত বেসরকারি সংস্থাগুলো দাবি করে। আগে অবাধে হাকালুকি হাওরে বিষটোপে পাখি শিকার করলেও এখন আর আগের মতো শিকার হয় না। মানুষের মধ্যে একটা সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে।

পরিবেশ অধিদফতরের সিবিএ-ইসিএ প্রকল্পের ন্যাচারেল রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট অফিসার বশির আহমদ জানান, হাওরে ১৫টি অভয়াশ্রম ঘোষণা করায় পরিযায়ী পাখিদের অবাধ বিচরণের ক্ষেত্র তৈরি হলো। এতে আগামীতে হাওরে আসা পরিযায়ী পাখির সংখ্যা বাড়বে। হাওরে আসা এসব পাখির বিষ্ঠায় মাছের খাবার হবে। ফলে মাছের উৎপাদন বাড়বে। মাছের উৎপাদন বাড়লে হাওরতীরের মানুষের জীবিকায়নের পাশাপাশি আমিষেরও চাহিদা পূরণ হবে।