কলাপাড়া থেকে কয়েক লাখ টাকা নিয়ে উধাও ভুয়া কোম্পানি ‘জন কল্যাণ সংস্থা’

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) থেকে মিলন কর্মকার রাজু: জমা টাকার দশগুণ ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়েছে “জন কল্যাণ সংস্থা” নামের একটি প্রতারক কোম্পানি। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার আলীপুরে জমা টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য এখন দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছে টাকা জমাদানকারীরা। গত তিনদিন আগে ৭/৮ জনের প্রতারক চক্রের সংস্থাটি উপজেলার লতাচাপলী, আলীপুর ও কুয়াকাটায় তাদের কার্যক্রম শুরু করে।

KALAPARA PIC=-1(29.05.2015)
দশগুণ ঋণ দেওয়ার লোভ দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়ে উধাও “জন কল্যাণ সংস্থা” নামের একটি প্রতারক কোম্পানি

স্থানীয়রা জানায়, তিনদিন আগে পাঁচ হাজার টাকায় আলীপুরের শওকত মঞ্জিলের দোতালা ভাড়া নেয় প্রতারক চক্রটি। ‘জন কল্যাণ সংস্থা’র নামে ঘর ভাড়া নিয়ে সাইনবোর্ড টানিয়ে শুরু করে তাদের কার্যক্রম। অফিস বলতে কয়েকটি রেজিষ্টার খাতা, একটি ষ্টিল আলমিরা ও সাইনবোর্ড। সাইনবোর্ডে সরকার অনুমোদিত গভঃ রেজিঃ নং ঢ-০৫৭০/১৯৯০ ইং এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্প শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ঋণ কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে এম.আর.এ সনদ নং ০০৮৫৩-০১৭১৭-০০৭৪৩, আর্থিক সহযোগিতায় পিকেএসএফ’র কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, দশগুণ ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সংস্থাটি প্রতিবেশীদের কাছ থেকে প্রথমে আদায় করেছে লক্ষাধিক টাকা। ১ লাখ টাকার বিপরীতে ১০ হাজার টাকা জামানত নেওয়া হয়। শনিবার থেকে ঋণ দেওয়া শুরু করার কথা বলে জনপ্রতি সর্বনি¤œ ৫ হাজার এবং সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আলীপুরের ব্রয়লাল মুরগী ব্যবসায়ী দিলিপের কাছ থেকে বৃহস্পতিবার ২০ হাজার টাকা জামানত হিসেবে নিয়েছে। তাকে শনিবার ২ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। এভাবে তার প্রতিবেশী রাজ্জাক ও তাওহীদের কাছ থেকে যথাক্রমে ২০ হাজার ও ১০ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। মোট জামানতের বিপরীতে ১০গুণ টাকা ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এসব টাকা হাতিয়ে নেয় সংস্থাটি।

হাতেমপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন আবু জাফর বেপারীর মেয়ে মোসাঃ  নুপুরকে ওই প্রতিষ্ঠানে হিসাব রক্ষকের চাকুরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বৃহস্পতিবার তাকে দিয়ে অফিস করায়। তাকে অফিসে বসিয়ে রেখে ওই এলাকার বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ঋণ দেওয়ার নামে হাজার হাজার টাকা উত্তোলন করে।

প্রতারণার শিকার নুপুর বলেন, ‘হাবিব (ম্যানেজার), রফিকুল, রাসেল নামে তারা অফিসের ৭জন ছিল। আমি যোগদান করব কি-না, সে সিদ্ধান্ত নিতে তাদের কার্যক্রম দেখতে বৃহস্পতিবার অফিসে গিয়েছিলাম। এ সময় তারা আমাকে অফিসে বসিয়ে রেখে ফিল্ডে বেরিয়ে যায়। পরে ম্যানেজার আমাকে ফোন করে কেউ টাকা নিয়ে এলে ওই টাকা তাদের নাম্বারে বিকাশ করতে বলে। আমি স্থানীয় সোলায়মানের ৬ হাজার টাকা বিকাশ করেছি। ওই দিন বিকেলের মধ্যেও কেউ ফিরে না আসায় আমি বাড়িওয়ালার কাছে অফিসের চাবি রেখে চলে আসি।

বাড়িওয়ালা হাজী ফরিদ উদ্দিন বলেন, আমি তাদের সাথে আজ শনিবার ঘরভাড়া চুক্তিপত্র করব বলে কথা ছিল। অফিসের আসবাবপত্র আমাকে দেখিয়ে বাকিতে এনেছে। ভেবেছিলাম শনিবার সব টাকা তো পেয়ে যাচ্ছি। প্রতারকচক্র বিভিন্ন জনের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন।

এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ও থানার ওসি মো. আজিজুর রহমান জানান, তারা এই বিষয়টি জানেন না এবং কেউ তাদের কাছে অভিযোগ করেনি। তবে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছেন বলে তারা জানান।