প্রতিনিধি, বাগেরহাট: চিকিৎসকের অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বাগেরহাটের শরণখোলায় এক শিশুসহ তিন জনের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযুক্ত ক্লিনিকের মালিকপক্ষ মোটা অংকের টাকায় সমঝোতা করলেও বিষয়টি নিয়ে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উপজেলা সদরে গড়ে ওঠা বহু ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নীতিমালা অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, অজ্ঞান করার বিশেষজ্ঞ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্সসহ অপারেশন থিয়েটারে অপারেশন করার তেমন যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করা হয়নি। এরপরও বিধিবহির্ভূতভাবে এসব ক্লিনিক হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে অপারেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসাও চালাচ্ছে।
এদিকে অবৈধ ক্লিনিক ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্রগুলোর বিরুদ্ধে শিগগিরই আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
গতকাল বুধবার রাতে উপজেলার সুন্দরবন ক্লিনিকে বগী গ্রামের এনায়েত জমাদ্দারের স্ত্রী রাহিমা বেগমের জরায়ুর অপারেশন করেন রেজিস্টার্ড মেডিকেল প্র্যাকটিশনার (আরএমপি) আবুল বাশার ও শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-স্বাস্থ্য সহকারী আ. করিম। পরে অপারেশনের থিয়েটারে রাহিমার মৃত্যু হয়।
সোমবার (৫ অক্টোবর) রায়েন্দা ক্লিনিকে উপজেলার খুড়িয়াখালী গ্রামের আফজাল হাওলাদারের স্ত্রী পিয়ারা বেগমের এ্যাপেন্ডিসাইটিস অপারেশন করেন ডা. নজরুল ইসলাম ফারুকী। অপারেশনের পর পিয়ারা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দ্রুত খুলনার একটি ক্লিনিকে ভর্তি করার পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়।
গত ২২ সেপ্টেম্বর বিকাল চারটায় প্রসব বেদনা নিয়ে উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের আবু সালাম শরীফের স্ত্রী সুমি আক্তার (২০) আছিয়া-সেকান্দার মেমোরিয়াল ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু চিকিৎসক আসার কথা বলে ছয় ঘন্টা বসিয়ে রেখে ডাক্তার না আসার অজুহাত দেখিয়ে রাত ১০টার দিকে রোগী ফেরতা দেয় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। ততক্ষণে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন সুমি। তাৎক্ষণিকভাবে পাশের একটি ক্লিনিকে নিয়ে গেলে সুমি একটি মৃত সন্তান প্রসব করেন। তবে সংশ্লিষ্ট ক্লিনিকগুলোর মালিকরা যথাযথভাবে চিকিৎসা হয়েছে বলে দাবি করে করেছেন।
এদিকে, তিনটি ঘটনা নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে। ক্লিনিকগুলিতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে চিকিৎসার নামে হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. অসীম কুমার সমাদ্দার বলেন, সরকারের নীতিমালায় ক্লিনিকগুলিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, অ্যানেস্থিসিয়া ডাক্তার, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স, পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি রাখার কথা। কিন্তু তা যথাযথ না থাকলে সমস্যা হতে পারে।
বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. অরুণ কুমার মন্ডল বলেন, অবৈধ ক্লিনিকগুলোর বিরুদ্ধে শীঘ্রই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।