রায়পুরে শ্রেণিকক্ষের দেয়াল ঘেঁসে জেনারেটর কক্ষ, ঝুঁকির মধ্যে বিদ্যালয় ভবন

মো. মাহবুবুল আলম মিন্টু, রায়পুর (লক্ষ্মীপুর): লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে ভবন সংলগ্ন জেনারেটর ব্যবসার কারণে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চরবংশী জয়নালীয়া উচ্চ বিদ্যালয় ভবন। কালো ধোঁয়া ও কম্পনে ধীরে ধীরে একাংশের দেওয়ালের আস্তরণ (পলেস্তরা) খসে পড়তে শুরু করেছে। এ করণে ভবনের ওই স্থানটি ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠছে।

new-image
রায়পুরে শ্রেণিকক্ষের দেয়াল ঘেঁসে জেনারেটর কক্ষ|

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের পশ্চিম পার্শ্বে দশম শ্রেণিকক্ষের দেয়াল ঘেঁষে গড়ে তোলা হয়েছে মাহমুদুর রহমান মুরাদের মালিকানাধীন বিশাল জেনারেটর কক্ষ। এখান থেকেই খাসেরহাট বাজারে দু’শতাধিক দোকান ও আশপাশের বাড়ি-ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। জেনারেটরের কালি ও ধোয়ায় আচ্ছাদিত বিদ্যালয়ের দেওয়ালের পুরোভাগ। অনেক ক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটরের কম্পনের কারণে এবং প্রচন্ড তাপে ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যাচ্ছে দেওয়ালের আস্তরণ।

খোঁজ নিয়ে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভবনের ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা ব্যাপক হলেও ওই জেনারেটর ব্যবসায়ী বিদ্যালয়কে বছরে দিচ্ছেন মাত্র ১৫শ’ টাকা। তিনি বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আ.লীগ নেতা মাষ্টার আলতাফ হোসেন হাওলাদারের জামাতা হওয়ায় দাপটের সঙ্গেই চালিয়ে যাচ্ছেন ক্ষতিকর এমন কাজটি। গত ৬/৭ বছর ধরে এ নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়দের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করলেও ক্ষমতার দাপটের কাছে লাঞ্ছিত হওয়ার আশংকায় কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেননা।

মাহমুদুর রহমান মুরাদ ২নং উত্তর চরবংশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হলেও সেখানে অনুপস্থিত থেকে তিনি খন্ডকালিন একজনকে দিয়ে নিজের দায়িত্ব পালন করাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। দায়িত্ব পালন না করেও তিনি ভোগ করছেন সরকারি বেতন-ভাতাদি। শিক্ষকের দায়িত্বে অনুপস্থিত থেকে বাজারে নিজের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকা নিয়েও স্থানীয়ভাবে নানান সমালোচনা রয়েছে।

জেনারেটর ব্যবসায়ী ও স্কুল শিক্ষক মাহমুদুর রহমান মুরাদ বলেন, আমি বিদ্যালয় কমিটিকে বছরে ১৫শ’ টাকা ভাড়া দিয়ে জেনারেটর ব্যবসা চালাচ্ছি। বিদ্যালয়ের কি ক্ষতি হচ্ছে সেটা আমার বিষয় নয়।

এ বিষয়ে চরবংশী জয়নালীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. হারুনুর রশিদ কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।

উপজেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা বেগম জানান, শিক্ষক মো. মুরাদের বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি কেউ তাকে জানায়নি। শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও খন্ডকালিন শিক্ষক দিয়ে পাঠদানের প্রশ্নই আসে না। ঈদের ছুটির পর বিদ্যালয় খুললে অভিযোগটি যাচাই করে দায়ী শিক্ষকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রায়পুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন বলেন, বিদ্যালয় ভবনের ক্ষতির বিষয়ে কেউ জানায়নি। খোঁজ-খবর নিয়ে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মাষ্টার আলতাফ হোসেন হাওলাদার বিএসসি বলেন, জামাতা মুরাদ বিদ্যালয়কে বছরে ১৫শ’ টাকা করে ভাড়া প্রদান করে। জেনারেটরের কারণে ভবনের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি জানা নেই। ক্ষতির বিষয়টি খোঁজ-খবর নিয়ে দেখা হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টিও দেখা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.