মো. মাহবুবুল আলম মিন্টু, রায়পুর (লক্ষ্মীপুর): লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নে ডাকাতিয়া নদীর প্রায় ২০ একর ভূমি পাঁচ বছর ধরে অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন স্থানীয় তিন প্রভাবশালী। কোনো বৈধ ইজারা ছাড়াই নদীতে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন তারা। এ তিন জন হলেন মোল্লারহাট এলাকার শাহজাহান মোল্লা, মোহাম্মদ আলী মোল্লা ও জাহাঙ্গীর হোসেন মোল্লা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আওতাধীন নদীটির এই অংশে মাছ চাষের জন্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে আসছেন। এ তৎপরতা রোধে পাউবো কোনো উদ্যোগ নেয়নি। দখলকারীদের কাছ থেকে পাউবোর কর্মীরা নিয়মিত মোটা অংকের টাকা নিচ্ছেন বলে স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেছেন। এছাড়া পাউবোর জমিতে অবৈধভাবে অর্ধশতাধিক দোকানঘর তোলা হয়েছে। এ ভূমি ইজারার নামে একটি চক্র ইতোমধ্যে কয়েক লাখ টাকাও হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে, পাউবোর পরিত্যক্ত ভবনগুলোতে মদ, গাঁজা সেবনসহ নানান অনৈতিক কাজ চলে বলে জানা গেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, হাজীমারার কাছ থেকে মোল্লারহাট হয়ে লক্ষ্মীপুর অংশের কাছ পর্যন্ত নদীটি কয়েকটি খণ্ডে ভাগ করে দখল করা হয়েছে। দখলকারী বা তাদের পরিবারের সদস্যরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। শাহজাহান মোল্লা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ইউপি সদস্য। জাহাঙ্গীর হোসেন মোল্লা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রশিদ মোল্লার ছেলে। মোহাম্মদ আলী মোল্লা যুবলীগের সঙ্গে জড়িত। মাছ চাষের জন্য তারা নদীর বিভিন্ন স্থানে আড়াআড়ি মজবুত বাঁধ দিয়েছেন। বাঁধের জন্য নদীর স্বাভাবিক পানি চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। বিভিন্ন স্থানে কচুরিপানা আটকে থাকছে।
নদীরপাড়ের বাসিন্দারা জানান, বর্ষায় পানি বেশি থাকে বলে নদীর পানি ব্যবহার করা গেলেও শুস্ক মৌসুমে পানি দূষিত হয়ে যায়। মাছ চাষের জন্য সার ও ওষুধ প্রয়োগ করায় ওই সময়ে পানি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। ওই তিন প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে পাউবোর কর্মকর্তাদের কাছে একাধিকবার নালিশ করা হলেও পাউবো জবরদখলকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। লক্ষ্মীপুর অংশের ডাকাতিয়া নদীতে সদর উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে নদীটি দখলমুক্ত করলেও রায়পুরে এ ধরনের কোনো অভিযান পরিচালিত না হওয়ায় নদী দখলমুক্ত হয়নি। এছাড়া পাউবোর ইজারা কার্যক্রম বন্ধ থাকার সুযোগে দখলকারীরা স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত পাউবো কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমঝোতা করে নদীর দখলে রেখেছেন।
ইউপি সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাহান মোল্লা বলেন, আগে আমরা মোল্লারহাট বহুমুখী সমবায় সমিতির নামে লিজ নিয়ে ডাকাতিয়া নদীতে মাছ চাষ করেছি। এখন কোনো লিজ নেই। মাছ চাষের জন্যই বিশেষ বাঁধ দেওয়া হয়েছে। পাউবো চাইলে দখল ছেড়ে দেওয়া হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেকশান অফিসার (এসও) মো. ইদ্রিস হোসেন বলেন, ২০১২ সালের পর থেকে ডাকাতিয়া নদীর ইজারা বন্ধ রয়েছে। দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এছাড়াও দোকানের বিরুদ্ধে জবরদখলের দুটি মামলা করা হয়েছে।