পচনরোগে মরে যাচ্ছে শিম গাছ, বিপাকে ঈশ্বরদীর চাষিরা

স্বপন কুমার কুন্ডু, ঈশ্বরদী (পাবনা): পোকা, ভাইরাস ও ছত্রাকের আক্রমণে ঈশ্বরদীর অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক ফসল শিম নিয়ে এবার বিপাকে চাষিরা। প্রতি বছর ঈশ্বরদী অঞ্চলের কৃষকরা কয়েক শ’ কোটি টাকার শিম বিক্রি করে। শিম শীতকালীন ফসল হলেও এখানকার কৃষকরা গ্রীম্মকালেও আগাম শিম আবাদ করে থাকেন। কিন্তু এবারে বাধ সেদেছে পচনরোগ। প্রতিবারের মতো লাভের আশায় এবারেও কৃষকরা বিপুল পরিমাণ জমিতে শিম চাষ করেছে। ভাইরাস ও পচনরোগ দেখা দেওয়ায় শিম চাষিরা এখন লোকসানের শংকায়।

Vegitable Issordi
কীটনাশক ও ওষুধ ছিটিয়েও লাভ হচ্ছে না, পচঁনরোগ ঠেকানো যাচ্ছে না।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার ঈশ্বরদীতে ১৪০০ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়েছে। তার মধ্যে মুলাডুলি ইউনিয়নেই শিমের আবাদ হয়েছে ৭০০ হেক্টর জমিতে। সরেজমিনে দেখা যায়, মুলাডুলি ইউনিয়নের রামনাথপুর, শেখপাড়া, রামেশ্বাপুর, ফরিদপুর ও মুলাডুলি, আটঘরিয়াসহ আশপাশের ১০টি গ্রামে  বেশ কয়েক বছর ধরে অসময়ে আগাম শিম চাষ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে রূপভান ও অটো শিম নামের দুই জাতের শিমই বেশি চাষ  হয়। এই শিম ইতোমধ্যেই বাজারে উঠতে শুরু করেছে। এই মুহূর্তে শিমে ভাইরাস ও পচনরোগ দেখা দেওয়ায় কৃষকরা পড়েছেন বিপদে। ভাইরাস রোগের কারণে গাছের পাতা হলুদ, ছিদ্র ও বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। দুর্বল হয়ে পড়ছে গাছ। ফলে শিমের ফুল ধরছে না। অনেক গাছে শিমের ফুল হলেও তা হলুদ হয়ে ঝরে পড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে অতিবৃষ্টির কারণে শিমের জমিতে বৃষ্টির পানি জমে যাওয়ায় এই পচন শুরু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কীটনাশক ও ওষুধ ছিটিয়েও লাভ হচ্ছে না। পচন ও ভাইরাসের জন্য তাঁরা এবার চরম লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন।

শেখপাড়া গ্রামের কৃষক জামাল মিয়া জানান, দীর্ঘদিন ধরে শিম চাষ করে এলেও এবারে তিনি বিপদে পড়েছেন। কারণ পোকার আক্রমণ। শিম হওয়ার আগেই ফুলে পোকা ধরেছে । তাই শিমক্ষেতে ওষুধ স্প্রে করেও কোন ফল পাওয়া যাচ্ছে না। জামাল মিয়া আরো জানান, ওষুধ কিনতে এরই মধ্যে অনেক টাকা খরচ করেছেন। কিন্তু এরপরও সমস্যার সমাধান হয়নি। এবার লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন। আরেক কৃষক জলেমান জানান, তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে রূপভান ও অটো শিম চাষ করেছিলেন। কিন্তু ভাইরাসের কবলে পড়ে তাঁর জমির অর্ধেক শিম নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক গাছও মারা গেছে। উপায়ান্তর না পেয়ে তিনি আক্রান্ত গাছ কেটে ফেলেছেন। কৃষক নুরুল আলম জানান, কৃষি বিভাগকে জানিয়ে কোন উপকার না পেয়ে স্থানীয় কীটনাশক ডিলারদের পরামর্শে শিমের পরিচর্যা করছেন। কিন্তু এতেও লাভ হচ্ছে না।

মুলাডুলির শিম চাষি ও শিম বাজারের আড়তদার বাবু জানান, শিম আবাদ অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা প্রতিবারের মতো এবারও বিপুল পরিমাণ জমিতে শিমের আবাদ করেছেন। কিন্তু পোকা আর ভাইরাসের আক্রমণে কৃষকদের ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়তে হবে। এরমধ্যে শিম বাজারে উঠতে শুরু করেছে। এখন প্রতি কেজি ৯০-১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিবছর এখানকার আড়তে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার শিম বিক্রি হয় বলে তিনি জানিয়েছেন।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রওশন জামাল জুয়েল বলেন, মুলাডুলিতে শিম আবাদে পোকা, ভাইরাস ও ছত্রাকের উপদ্রব এবার বেশি। আবহাওয়াজনিত সমস্যার কারণে এই অবস্থা হয়েছে। এছাড়া কৃষকরা রোগাক্রান্ত শিম গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে পরবর্তীতে ওই বীজ বপন করায় গাছ রোগ নিয়েই জন্মগ্রহণ করে। এতে ফলন কম হচ্ছে, গাছ আরও বেশি রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছে। ভাল ফলন পেতে হলে উন্নতমানের বীজ বপন করতে হবে বলে তিনি জানান।

Save

Save

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.