শ্যামল হেমব্রম হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন, আদিবাসীদের ভূমি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি

প্রতিনিধি, শেরপুর ও দিনাজপুর: শ্যামল হেমব্রম হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও  বিচার চেয়ে শেরপুর এবং দিনাজপুরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এসব কর্মসূচি থেকে আদিবাসী ও বাঙালিদের অধিগ্রহণ করা ভূমি মূল মালিক বা তাদের উত্তরসূরীদের ফিরিয়ে দেবার দাবিও করা হয়।

রোববার বিকেলে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে রংপুর চিনিকলের জমিতে আখ কাটাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান শ্যামল হ্যামব্রম (৩৫)।

sawtal-shaymol-hembrom-murder-protestএ ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার দুপুরে শেরপুর শহরের রঘুনাথ বাজার সড়কে পৌর টাউন হলের সামনে হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডারস ফোরাম মানববন্ধন করে।

মানববন্ধনে একাত্মতা প্রকাশ করে অন্যান্যের মাঝে সদর উপজেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মো. সোলাইমান আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক গাজী সাইফুল ইসলাম, জনউদ্যোগ সদস্যসচিব হাকিম বাবুল, আদিবাসী সংগঠক সুমন্ত বর্মণ, এইচআরডি আহ্বায়ক লক্ষণচন্দ্র বর্মণ, মো. শান্ত মিয়া বক্তব্য রাখেন।

বক্তারা ভূমি রক্ষায় আন্দোলনরত আদিবাসী ও বাঙালিদের ওপর হামলা-নির্যাতন ও গুলির তীব্র প্রতিবাদ জানান। তারা অধিগ্রহণকৃত ভূমি প্রকৃত মালিকদের নিকট হস্তান্তরের দাবী জানানো হয়।

মঙ্গলবার সকালে দিনাজপুর প্রেসক্লাবে রংপুর বিভাগীয় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মুখপাত্র এ্যাড. মাইকেল বি মালো সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করেন যে, ৬ নভেম্বর সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মে অধিগ্রহণকৃত জমিকে কেন্দ্র করে রংপুর সুগার মিলের কর্মচারী ও ভাড়াটে লোকেরা পুলিশের ছত্রছায়ায় ব্যাপক হামলা আর নির্যাতন চালিয়ে লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগ করেছে।

তিনি জানান, ১৯৬২ সালে পাকিস্তান শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন রংপুর সুগার মিলের আখ চাষের জন্য ১ হাজার ৮৪২ একর সম্পত্তি অধিগ্রহণ করে। এতে ১৫টি আদিবাসী গ্রাম ও পাঁচটি বাঙালি গ্রামের বাসিন্দারা ভূমি হারায়। ২০০৪ সালে ৩১ মার্চ সুগার মিলটির উৎপাদন বন্ধ হলে কর্তৃপক্ষ আখের বদলে অধিগ্রহণকৃত জমিতে ধান, গম, সরিষা, আলু চাষ শুরু করে। চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে এসব জমিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তামাক ও হাইব্রিড ভুট্টা চাষ করা হচ্ছে।

লিখিত বক্তব্যে আরো জানানো হয়, অধিগ্রহণ করা জমিতে সুগার মিলের আখ চাষ না হওয়ায় তা মূল মালিক আদিবাসী ও বাঙালিদের ফেরত দেয়ার শর্ত থাকলেও কর্তৃপক্ষ দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে এসব জমি ইজারা দিয়ে দেয়। আদিবাসীরা জমি ফেরত পাওয়ার জন্য আন্দোলন শুরু করলে ৬ নভেম্বর তাদের উপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। আদিবাসীদের গ্রাম মিলের ভাড়াটিয়া গুন্ডারা ঘিরে রেখেছে। মানবেতর জীবন যাপন করছে নিরীহ ও অসহায় আদিবাসী পরিবারগুলো।

সংবাদ সম্মেলনে অবিলম্বে প্রকৃত মালিকদের জমি ফেরত, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সুগার মিলের কর্মকর্তাদের শাস্তি এবং হামলা, নির্যাতন ও হত্যার সাথে জড়িত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নেতা লরেন্স বেক, পাতরাজ সরেন, যোগেন বেসরা, জুলিয়ান সরেন ও মারিয়া হাসদা।

এর আগে প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.