বাগেরহাট প্রতিনিধি: বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের বঙ্গোপসাগর পাড়ে দুবলারচরের আলোরকেলে শনিবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে প্রায় দুইশ’ বছরের পুরানো ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব। সনাতন ধর্মালম্বীদের তিন দিনব্যাপী এই উৎসবকে ঘিরে গোটা সুন্দরবনে হাজার-হাজার পুণ্যার্থী ও দেশী-বিদেশী পর্যটকদের জন্য নেয়া হয়েছে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যাবস্থা। রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে দুবলারচরের আলোরকোলে বসেছে রাস মেলা।
রাস উৎসবে যোগ দিতে সুন্দরবন বন বিভাগ ৮টি রুট নির্ধারণ করে দিয়েছে। এসব রুট দিয়ে নৌকা, ট্রলার, লঞ্চ ও অন্যান্য নৌযানে করে পুণ্যার্থী ও দেশী-বিদেশী পর্যটকরা ইতিমধ্যেই আলোরকোলে পৌঁছাতে শুরু করেছেন। তবে এবার এই উৎসবে বন্যপ্রাণী বাচাঁতে শনিবার থেকে তিন দিন সুন্দরবনে সব ধরনের পাস পারমিট বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে বন বিভাগ। আগামী সোমবার দিনের প্রথম জোয়ারে সাগরের লোনা জলে পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এই রাস উৎসব।
প্রতি বছর কার্তিক মাসের শেষ বা অগ্রহায়ণ মাসের শুরুতে ভরা পূর্ণিমায় সাগর পাড়ের দুবলারচরের আলোরকোলে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে তিন দিনব্যাপী রাস উৎসব। এবার তিথি অনুযায়ী ১২ নভেম্বর থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে এই রাস উৎসব। এবার রাস উৎসবের মেলায় হস্ত ও কুটির শিল্পের কয়েক’শ দোকানি পসরা সাজিয়ে বসেছে। থাকছে জারি-সারি গানসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
সুন্দরবনের দুবলারচরের আলোরকোলে রাস উৎসবে যেতে এবার ঢাংমারী, বগি, শরণখোলা, বুড়িগোয়ালিনী, কদমতলা, কৈখালী, কয়রা ও নালিয়ান স্টেশন হয়ে এই ৮টি রুটের অনুমতি দিয়েছে বন বিভাগ। এসব রুটেও নেয়া হয়েছে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যাবস্থা। টহল দিচ্ছে বনরক্ষী, পুলিশ, কোস্টগার্ড, র্যাব ও নৌবাহিনীর সদস্যরা।
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম বলেছেন, ঐতিহাসিক এই রাস উৎসবকে ঘিরে এবার বঙ্গোপসাগর উপকূলসহ সুন্দরবনে বন বিভাগের ১৮টি টহল টিমের পাশাপাশি কোস্টগার্ড, র্যাব, নৌ বাহিনী ও পুলিশ নিয়োজিত রয়েছে। রাস উৎসবে আগতদের হাত থেকে বন্যপ্রাণী বাচাঁতে তিন দিন সুন্দরবনে সব ধরনের পাস পারমিট দেয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। হরিণসহ বন্যপ্রাণী শিকার রোধে ভ্রাম্যমান টিম সুন্দরবনে আগতদের উপর সার্বক্ষণিক নজর রাখছে। পুণ্যার্থী ও দর্শণার্থীদের কোন প্রকার রান্না করা মাংস এমনকি ছাগল-মুরগি নিয়েও সুন্দরবনে প্রবেশের আনুমতি দেয়া হচ্ছেনা। এবারই প্রথম পুণ্যার্থীদের চেয়ে অন্য ধর্মের দর্শণার্থীদের রাস উৎসবে যোগ দিতে পর্যটকদের ন্যায় রাজস্ব আদায় করা হচ্ছে।