খরস্রোতা শালতা নদী এখন মৃতপ্রায়, জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক

আমিনা বিলকিস ময়না, সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার তালা উপজেলা এবং খুলনার পাইকগাছা ও ডুমুরিয়া উপজেলার মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে খরস্রোতা শালতা নদী, যা এখন মৃতপ্রায় খালে পরিণত হয়েছে। এর ফলে খুলনা বিভাগের দুইটি জেলা সাতক্ষীরা ও খুলনার তিনটি উপজেলার দশটি ইউনিয়নের ৭০/৮০ টি গ্রামের পানি নিস্কাশন বন্ধ হয়ে প্রতি বছর জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এই এলাকার পানি নিস্কাশন না হওয়ার ফলে প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ফসল ফলানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। যার কারণে এলাকার কয়েক হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

Satkhira Salta river
খরস্রোতা শালতা নদী এখন মৃতপ্রায়, জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক।

শালতা নদীর চর ভরাট হওয়া জমি এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দখলে চলে যাওয়ায় শালতা নদী আজ সরু ড্রেন ছাড়া আর কিছুই না।

এদিকে, সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার তালা সদর ও খলিলনগর ইউনিয়ন এবং খুলনা জেলার পাইকগাছা ও ডুমুরিয়া উপজেলার সীমানা বিভাজন করে মাগুরখালী ইউনিয়নের কাঞ্চননগরের ঘ্যাংরাইল নদীতে মিলিত হয়েছে এই শালতা নদী। ঘ্যাংরাইল নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০ কিলোমিটার। শালতা অববাহিকায় মোট ৫৩ টি গ্রাম রয়েছে। এখানে ২৫ হাজার হেক্টর ফসলি জমি আছে, যার মধ্যে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে প্রতি বছর আমন ফসল ফলানো সম্ভব হচ্ছে না। জনসংখ্যার দিকে নজর দিলে দেখা যায় এই এলাকায় প্রায়  আড়াই থেকে তিন লাখ মানুষের বসবাস।

কপোতাক্ষ তীরবর্তী এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হলে পানি নিস্কাসনের একমাত্র পথ শালতা নদী। যে নদী দিয়ে তালা উপজেলার প্রায় ৪/৫ টি ইউনিয়নের পানি নিস্কাসনের বর্তমান একমাত্র উপায় কিন্তু আজ শালতা নদী মরাখালে পরিণত। শালতা নদী ডুমুরিয়া উপজেলার গোলাপদাহের চর্তুমোহনা থেকে পূর্বমূখী আমতলী শাখা নদীর মাধ্যমে তেলিগাতী-ঘ্যাংরাইল নদীর সঙ্গে সংযোগ রয়েছে। কাঞ্চননগরের ঘ্যাংরাইল নদী থেকে উজানের আরশনগর-চন্ডীপুর পর্যন্ত বর্তমান শালতা নদী সীমাবদ্ধ।

কপিলমুনি ইউনিয়নের গোয়ালবাথান গ্রামের মৃত গনেশ মন্ডল জানান, এক সময় শালতা নদীতে বড় বড় গহনা নৌকা, লঞ্চ, কার্গো চলতে দেখেছেন। খুলনা থেকে বারোবাড়িয়া হয়ে কপিলমুনি (কপোতাক্ষ) পর্যন্ত লঞ্চ, ইস্টিমার আসতো। শালতা নদীতে এতো স্রোত ছিল যে নদীর পাড়ে দাঁড়ালে স্রোতের শব্দে ভয় পেত মানুষ। নৌকায় নদীটি পাড়ি দেয়া খুবই কষ্টকর ছিল। নদীতে তখন কুমীর ছিল, চরে তাদের দেখা মিলতো। ভাটিতে দেড় থেকে দু’শ ফুট পানি থাকতো।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, শালতা নদীর উজান অংশে গোলাপদাহ নামক স্থানে ১৯৭২ সালে বাঁধ দিয়ে নদী শাসন করা শুরু হয়। ফলে পোল্ডার অন্তর্ভুক্ত অংশ মারা গেছে এবং চরভরাটের জায়গায় কালক্রমে জনবসতি, হাট, বাজার, গড়ে উঠেছে। পোল্ডারের বাহিরে যে জীবিত অংশ বর্তমান তার দু’ধারে ওয়াপদার বাঁধ দেওয়া আছে। এই ওয়াপদার বাঁধের পূর্বপারে ৯ টি ও পশ্চিম পারে ৫ টি ¯¬ুইজ গেটের মাধ্যমে লোনা পানির মাছ চাষ করা হচ্ছে। যে কারণে কৃষিখাত হুমকির মধ্যে পড়েছে। পোল্ডারের মধ্যবর্তী কিছু বিলে কৃষি জমি থাকলেও সেখানে এখন লোনা পানির মাছ চাষের পাঁয়তারা চলছে।
অন্যদিকে ঘেরবেড়ী করার জন্য ¯¬ুইস গেটগুলো চিংড়ি চাষিরাই ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। নদী ভরাটকৃত চরজমি কতিপয় প্রভাবশালী ব্যাক্তিদের অবৈধ দখলে চলে গেছে। নদীটি এখন মাত্র ৬ থেকে ৮ ফুট চওড়া আছে। নদীতে যে জোয়ার আসে তা লোনা পানির মাছ চাষের জন্য বিলে উঠানো হয়। স্লুইস গেটগুলোর বাইরে পলি ভরাট হয়ে কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এমনকি অধিকাংশ গেটের ভিতরে ও গেট সংলগ্ন খালে পলিভরাট হয়ে নিস্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে যা অল্প বৃষ্টিতেই এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

বর্তমানে শালতা নদী বাঁচাতে হলে শালতা নদীর নিম্নে খোরেরাবাদ খেয়াঘাট থেকে আরশনগর-চন্ডীপুর পর্যন্ত (৯কিমি.), গোলাপদহ থেকে পূর্বমূখী আমতলী নদী ও বাদুরগাছা নদী (১০কিমি.) পুনঃখনন করে জোয়ার ভাটা চালু হলে কিছুটা এলাকার জলাবদ্ধতা কমবে বলে ভুক্তভোগীদের ধারণা।

নদীর মধ্যে সকল কাঠের ব্রীজ, সাঁকো, বাঁধ, নেটের বেড়া অপসারণ এবং নদীকে সকল ধরণের দখলমুক্ত করা এই মূহুর্তে জরুরি হয়ে পড়েছে। নদী খননের জন্য কোন মেশিন নয়, ঝুড়ি-কোদালের সাহায্যে তা খননের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য এলাকাবাসী প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন।
খরস্রোতা শালতা নদী এখন মৃতপ্রায়, জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক

আমিনা বিলকিস ময়না, সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার তালা উপজেলা এবং খুলনার পাইকগাছা ও ডুমুরিয়া উপজেলার মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে খরস্রোতা শালতা নদী, যা এখন মৃতপ্রায় খালে পরিণত হয়েছে। এর ফলে খুলনা বিভাগের দুইটি জেলা সাতক্ষীরা ও খুলনার তিনটি উপজেলার দশটি ইউনিয়নের ৭০/৮০ টি গ্রামের পানি নিস্কাশন বন্ধ হয়ে প্রতি বছর জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এই এলাকার পানি নিস্কাশন না হওয়ার ফলে প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ফসল ফলানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। যার কারণে এলাকার কয়েক হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

শালতা নদীর চর ভরাট হওয়া জমি এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দখলে চলে যাওয়ায় শালতা নদী আজ সরু ড্রেন ছাড়া আর কিছুই না।

এদিকে, সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার তালা সদর ও খলিলনগর ইউনিয়ন এবং খুলনা জেলার পাইকগাছা ও ডুমুরিয়া উপজেলার সীমানা বিভাজন করে মাগুরখালী ইউনিয়নের কাঞ্চননগরের ঘ্যাংরাইল নদীতে মিলিত হয়েছে এই শালতা নদী। ঘ্যাংরাইল নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০ কিলোমিটার। শালতা অববাহিকায় মোট ৫৩ টি গ্রাম রয়েছে। এখানে ২৫ হাজার হেক্টর ফসলি জমি আছে, যার মধ্যে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে প্রতি বছর আমন ফসল ফলানো সম্ভব হচ্ছে না। জনসংখ্যার দিকে নজর দিলে দেখা যায় এই এলাকায় প্রায়  আড়াই থেকে তিন লাখ মানুষের বসবাস।

কপোতাক্ষ তীরবর্তী এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হলে পানি নিস্কাসনের একমাত্র পথ শালতা নদী। যে নদী দিয়ে তালা উপজেলার প্রায় ৪/৫ টি ইউনিয়নের পানি নিস্কাসনের বর্তমান একমাত্র উপায় কিন্তু আজ শালতা নদী মরাখালে পরিণত। শালতা নদী ডুমুরিয়া উপজেলার গোলাপদাহের চর্তুমোহনা থেকে পূর্বমূখী আমতলী শাখা নদীর মাধ্যমে তেলিগাতী-ঘ্যাংরাইল নদীর সঙ্গে সংযোগ রয়েছে। কাঞ্চননগরের ঘ্যাংরাইল নদী থেকে উজানের আরশনগর-চন্ডীপুর পর্যন্ত বর্তমান শালতা নদী সীমাবদ্ধ।

কপিলমুনি ইউনিয়নের গোয়ালবাথান গ্রামের মৃত গনেশ মন্ডল জানান, এক সময় শালতা নদীতে বড় বড় গহনা নৌকা, লঞ্চ, কার্গো চলতে দেখেছেন। খুলনা থেকে বারোবাড়িয়া হয়ে কপিলমুনি (কপোতাক্ষ) পর্যন্ত লঞ্চ, ইস্টিমার আসতো। শালতা নদীতে এতো স্রোত ছিল যে নদীর পাড়ে দাঁড়ালে স্রোতের শব্দে ভয় পেত মানুষ। নৌকায় নদীটি পাড়ি দেয়া খুবই কষ্টকর ছিল। নদীতে তখন কুমীর ছিল, চরে তাদের দেখা মিলতো। ভাটিতে দেড় থেকে দু’শ ফুট পানি থাকতো।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, শালতা নদীর উজান অংশে গোলাপদাহ নামক স্থানে ১৯৭২ সালে বাঁধ দিয়ে নদী শাসন করা শুরু হয়। ফলে পোল্ডার অন্তর্ভুক্ত অংশ মারা গেছে এবং চরভরাটের জায়গায় কালক্রমে জনবসতি, হাট, বাজার, গড়ে উঠেছে। পোল্ডারের বাহিরে যে জীবিত অংশ বর্তমান তার দু’ধারে ওয়াপদার বাঁধ দেওয়া আছে। এই ওয়াপদার বাঁধের পূর্বপারে ৯ টি ও পশ্চিম পারে ৫ টি ¯¬ুইজ গেটের মাধ্যমে লোনা পানির মাছ চাষ করা হচ্ছে। যে কারণে কৃষিখাত হুমকির মধ্যে পড়েছে। পোল্ডারের মধ্যবর্তী কিছু বিলে কৃষি জমি থাকলেও সেখানে এখন লোনা পানির মাছ চাষের পাঁয়তারা চলছে।
অন্যদিকে ঘেরবেড়ী করার জন্য ¯¬ুইস গেটগুলো চিংড়ি চাষিরাই ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। নদী ভরাটকৃত চরজমি কতিপয় প্রভাবশালী ব্যাক্তিদের অবৈধ দখলে চলে গেছে। নদীটি এখন মাত্র ৬ থেকে ৮ ফুট চওড়া আছে। নদীতে যে জোয়ার আসে তা লোনা পানির মাছ চাষের জন্য বিলে উঠানো হয়। স্লুইস গেটগুলোর বাইরে পলি ভরাট হয়ে কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এমনকি অধিকাংশ গেটের ভিতরে ও গেট সংলগ্ন খালে পলিভরাট হয়ে নিস্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে যা অল্প বৃষ্টিতেই এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

বর্তমানে শালতা নদী বাঁচাতে হলে শালতা নদীর নিম্নে খোরেরাবাদ খেয়াঘাট থেকে আরশনগর-চন্ডীপুর পর্যন্ত (৯কিমি.), গোলাপদহ থেকে পূর্বমূখী আমতলী নদী ও বাদুরগাছা নদী (১০কিমি.) পুনঃখনন করে জোয়ার ভাটা চালু হলে কিছুটা এলাকার জলাবদ্ধতা কমবে বলে ভুক্তভোগীদের ধারণা।

নদীর মধ্যে সকল কাঠের ব্রীজ, সাঁকো, বাঁধ, নেটের বেড়া অপসারণ এবং নদীকে সকল ধরণের দখলমুক্ত করা এই মূহুর্তে জরুরি হয়ে পড়েছে। নদী খননের জন্য কোন মেশিন নয়, ঝুড়ি-কোদালের সাহায্যে তা খননের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য এলাকাবাসী প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.