পাথরের ফাঁদ: বগুড়ায় লোক ঠকানোর রমরমা ব্যবসা

তানজীমা রহমান মিষ্টি, বগুড়া: পাথর ব্যবহারে সব সমস্যার সমাধান হবে; কোনো রোগ, শোক, হতাশা, ব্যর্থতা থাকবে না। জিন-ভূতের আছরও দূর হবে। এমন সব লোভনীয় কথা বলে বগুড়ায় মানুষকে ঠকাচ্ছে তথাকথিত জ্যোতিষিরা।

শহরের বিভিন্ন জায়গায় সনদবিহীন এসব জ্যোতিষদের দেখা মেলে। ফুটপাতে মাদুর বিছিয়ে গ্রহ-উপগ্রহের কুপ্রভাব থেকে রক্ষার কথা বলে সাধারণ মানুষের কাছে পাথর বেচে তারা। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারী-পুরুষ এসব পাথরের খদ্দের। বিশেষ করে শহর ও গ্রামের নারীরা এসব পাথর বেশি কেনে। বিক্রেতাদের দাবি- জাদু-টোনা, জিন-ভূতের আছর ছাড়ানো, রোগ মু্ক্তি, মামলা জয়, দাম্পত্য সুখ, বিয়ে না-হওয়াসহ যাবতীয় মুশকিলের সমাধান এসব পাথর। বাক্সের মধ্যে হরেকরকম পাথর সাজিয়ে রাখা হয়েছে। আকার-আকৃতি, রং ও ধরনভেদে এসব পাথরের দামও ভিন্ন। সাধারণত ১৫০ থেকে ৬০০ টাকা মূল্যের পাথর পাওয়া যায় এসব জ্যোতিষীদের কাছে।

সুলেমানি, মরিয়ম, মুক্তা, পান্না, ফিরোজা ও সাধারণ দরবেশি পাথরসহ অনেক নামের পাথর রয়েছে তাদের ভান্ডারে। শনি, রাহু ও মঙ্গল থেকে রক্ষা পেতেই এসব পাথর ব্যবহারের পরামর্শ দেন তারা। আর এভাবেই  সাধারণ জনগণের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেন তারা।

কলোনি মোড়ের কথিত জ্যোতিষী শফিকুল ইসলাম নুরী জানান, তার কাছে বিভিন্ন প্রকারের পাথর রয়েছে। এসব পাথরের নামও রয়েছে। বিভিন্ন পাথরের কার্যাবলিও ভিন্ন। তার মতে, মেয়েদের জন্য মরিয়ম পাথর বিশেষভাবে উপকারী। এ পাথর ব্যবহারে সর্দি-কাশিসহ সকল ঠাণ্ডাজনিত রোগ দূর দয়। এছাড়া বাচ্চা প্রসবের সময় পাথর ব্যবহার করলে প্রসব ব্যথা কমে যায়। মরিয়ম পাথরের গুণ এত বেশি যে সাপে কাটা রোগী এ পাথর দুধের ভেতর ভিজিয়ে রেখে পান করলে সাপের বিষ পর্যন্ত কেটে যায় বলে দাবী করেন নুরী।

আবুল হাসান নামের একজন ক্রেতা বলেন, মানসিক ও পারিবারিক অশান্তি থেকে মুক্তির আশায় এবং অর্থ সংকট দূর করার জন্যই পাথর ব্যবহার করি। যখন যেই জ্যোতিষী পাই তখন তার দেয়া পাথরই ব্যবহার করি। উপকার পেয়েছেন কিনা জিজ্ঞেস করলে এই ক্রেতা হেসে উত্তর দেন: এখনো উপকার পাইনি।

সাজেদা বেগম নামের নারী ক্রেতা বলেন, জিনের আছর থেকে মুক্তি পেতে আংটি ব্যবহার করি। তার দাবি, জিন তাকে মাঝে মাঝে এসে জ্বালাতন করে।

শহরের স্বীকৃত জ্যোতিষী কার্তিক কুমার রায় বলেন, শিক্ষা ও সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে মানুষকে এসব ফাঁদ থেকে মুক্ত করা সম্ভব। অন্যথায় এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। জ্যোতিষ শাস্ত্রের ওপর শিক্ষা ও গবেষণার পর এ পেশার সাথে জড়িত হওয়া উচিত। কারণ জ্যোতিষ শাস্ত্রের ওপর পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকলে এ পেশা পরিচালনা করা সম্ভব নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.