শেরপুর, ২০ ডিসেম্বর ২০১৪, রেজাউল করিম: ভারত থেকে চাল আমদানি প্রভাবে এবং দেশীয় অটোরাইস মিলের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে শেরপুরের চাতাল রাইস মিলগুলি বন্ধের দোরগোড়ায়। এতে অর্ধালক্ষাধিক চাতাল শ্রমিকদের জীবিকা অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
কয়েকজন শ্রমিক ও মিল মালিকের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভারত থেকে আমদানিকৃত চালের দাম বাংলাদেশ চালের তুলনায় কম। ভারতীয় চালের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে চাতাল মিলের চালও কমদামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে মালিকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। জেলার বেশিরভাগ চাতাল মিল মালিক পুঁজি হারানোর শংকার মধ্য রয়েছেন। অনেকে হয়েছেন ঋণখেলাপি।
চাতাল মালিকদের অভিযোগ, ভারতীয় চাল আমদানির কারণে স্থানীয় চাতাল মিলগুলিতে ক্রমেই বাড়ছে লোকসানের মাত্রা। লোকসানে পড়ে ঋণখেলাপি হয়েছে হক চাউল কল, আফরিন চাউল কল, ফেরদৌস চাউল কল, সোহেলরানা চাউল কলসহ শতাধিক চাউল কল মালিক। জানা যায়, ৬০ ভাগ মিল কোনওোরকম টিকে থাকলেও পুঁজিহারা হয়েছে ৪০ ভাগ।
সূর্যমুখী রাইস মিল মালিক সুলতান আহমেদসহ অনেকে জানান, চালের বাজার প্রতিযোগিতার টিকে থাকা যেন তাদের পক্ষে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দেশের সবচেয়ে বেশি চাল রপ্তানিকারক জেলার মধ্যে শেরপুর অন্যতম। এখানে রাইসমিলের সংখ্যাও দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় অনেক বেশি। হাজার হাজার চাতাল শ্রমিক কাজ করেন মিলগুলিতে। আমদানি-রপ্তানির গ্যাঁড়াকলে নাজেহাল প্রায় ১১শ চাতাল রাইসমিল মালিক। অব্যাহত লোকসানের কারণে এরই মধ্যে ব্যবসা ছেড়েছেন কেউ কেউ। অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলার চিন্তাভাবনা করছেন। এভাবে চলতে থাকলে দেশের বৃহত্তম চাল উৎপাদনকারি জেলা শেরপুর থেকে স্বল্পপুঁজির চাতাল মিলগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। এতে কাজ হারাবে ৫০ হাজারের বেশি চাতাল শ্রমিক।
সরেজেমিন আরও জানা যায়, বিদেশি চাল ক্রয় বন্ধসহ কয়েকটি দাবি ওঠেছে। চাতাল শ্রমিক ও মালিকরা মানববন্ধন করে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন।
শেরপুর জেলা মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রৌশন বলেন, দু-তিন বছরের মন্দা মোকাবেলা করতে হয়েছে দেশি মিলগুলিকে। তিনি আরও বলেন, গত কয়েক বছরের লোকসান গুনে অনেকেই মিলের মাঠ প্লট বানিয়ে বাসা বাড়ির জন্য বিক্রি করে দিয়েছেন।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অফিসার ফারুক পাটোয়ারী জানান, গত বোরো মৌসুমে অনেক মিলার বিডিং করেও লোকসানের ভয়ে সরকারের সাথে সম্পাদিত চুক্তির বরাদ্দকৃত চাল সরবরাহ করেননি।