একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক কৃষি প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির নেতা সৈয়দ মো. কায়সারকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
তার বিরুদ্ধে আনীত ১৬টি অভিযোগের মধ্যে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, আটক, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠন এবং ষড়যন্ত্রের ১৪টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এসব অভিযোগের সাতটিতে তাকে মৃত্যুদণ্ড, চারটিতে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও তিনটিতে বিভিন্ন মেয়াদে মোট ২২ বছরে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
মৃত্যুদণ্ড পাওয়া অভিযোগগুলোর মধ্যে ধর্ষণের দুটি অপরাধও ছিল। একাত্তরের ধর্ষণের অপরাধে প্রথমবারের মতো কাউকে মৃত্যুদণ্ড দিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ধর্ষণের শিকার দুই নারী ও এক যুদ্ধশিশুও কায়সারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল আজ মঙ্গলবার এই রায় দেন। ৪৮৪ পৃষ্ঠার রায়ের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। বিচারক প্যানেলের অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি শাহীনুর ইসলাম ও বিচারপতি মো. মুজিবুর রহমান মিয়া। এর আগে বেলা এগারটা ৩ মিনিটে ট্রাইব্যুনালে এসে এজলাসকক্ষে আসন নেন বিচারপতিরা। শুরুতে সংক্ষিপ্ত ভূমিকা বক্তব্য দেন ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান।
মুক্তিযুদ্ধের সময় হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার স্থানীয় মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের নিয়ে মুসলিম লীগের সাবেক এই নেতা ‘কায়সার বাহিনী’ গঠন করেন এবং পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে হত্যাসহ নৃশংসতায় অংশ নেন।
২০১৩ সালের ২১ মে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কায়সারকে গ্রেপ্তারের পর ট্রাইব্যুনাল তাকে কারাগারে পাঠান। তবে শারীরিক কারণে ৫ আগস্ট তাকে জামিন দেওয়া হয়। মামলার কার্যক্রম শেষ হওয়া পর্যন্ত তিনি জামিনে ছিলেন। এ বছরের ২০ আগস্ট কার্যক্রম শেষে ট্রাইব্যুনাল মামলাটিকে রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন। এদিন কায়সারের জামিন বাতিল করা হয়।
গত ২ ফেব্রুয়ারি কায়সারের বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচার শুরু হয়। ৯ মার্চ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত কায়সারের বিরুদ্ধে ৩২ জন সাক্ষ্য দেন।
১৯৬২ সালে মুসলিম লীগে যোগ দিয়ে কায়সার রাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে তিনি যুক্তরাজ্যে পালিয়ে যান। ১৯৭৮ সালে দেশে ফিরে তিনি বিএনপিতে ও পরে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। হবিগঞ্জ-৪ আসন থেকে তিনি ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং মন্ত্রিত্ব পান।