সুন্দরবন আর মংলা বাঁচাতে ঘষিয়াখালী নৌপথ সচলের দাবিতে পদযাত্রা

বাগেরহাট থেকে বাবুল সরদার: আন্তর্জাতিক নৌপথ মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল দ্রুত সচল করে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন ও মংলা বন্দর রক্ষার দাবিতে বৃহস্পতিবার (১ জানুয়ারি) বাগেরহাটে  দীর্ঘ পদযাত্রা ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় অবৈধ বাঁধ অপসারণসহ চ্যানেলটি খনন করে নৌপথটি পুনরায় সচল করার দাবি করা হয়।

রামপালের ভরাট হয়ে যাওয়া দাউদখালী নদীর শ্রীফলতলা সেতুর নিচ থেকে শুরু হয়ে ঘষিয়াখালী চ্যানেল পর্যন্ত এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। পদযাত্রা ও মানববন্ধনের শুরুতে অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন শেখের সভাপতিত্বে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে বলা হয়-  মংলা-ঘষিয়াখী চ্যানেলটি পরিকল্পিতভাবে খনন এবং পুনর্খনন প্রয়োজন। বর্তমানে অবস্থায় খনন করলে চ্যানেলটি ছয় মাসের মধ্যে আবার ভরাট হয়ে যাবে। প্রায় সাত কিলোমিটার বাঁক থাকায় জোয়ারভাটার সময় দ্বিমুখী পানির টানে এখানকার সবসময় পানি স্থির থাকে। এতে পলি জমে নদী দ্রুত নাব্যতা হারায়। চ্যানেলটি সচল করতে হলে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে।

দাউদখালী নদীর শুকনো বুক থেকে পদযাত্রার প্রস্তুতি।
দাউদখালী নদীর শুকনো বুক থেকে পদযাত্রার প্রস্তুতি।

সমাবেশে আরও বলা হয়- চ্যানেলের প্রধান দুটি সংযোগ নদী দাউদখালী ও বিসনা পুনখর্নন, বিলীন অংশ পুনরুদ্ধার, এর উপর সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদসহ নদী দুটির সব সংযোগ খালের উপর নির্মিত কয়েক শ’ অবৈধ বাঁধ অপসারণ করে স্রোতধারা ঘষিয়াখালী চ্যানেলের সাথে মিশিয়ে দিলে নদীর প্রবাহ বেড়ে যাবে। ফলে চ্যানেলটি আবার আগের মতো সচল হবে।

বক্তারা দাবি করেন, ধীরগতিতে খনন কাজ চললে একদিক দিয়ে কাটলে চ্যানেলের অন্য অংশ ভরাট হয়ে যাবে। এজন্য একই সঙ্গে একাধিক ড্রেজার দিয়ে একই মৌসুমে খনন কাজ শেষ করতে হবে। পরিকল্পিতভাবে খনন কাজ না করলে কেবল অর্থের অপচয় হবে।

সমাবেশে আরও বলা হয়- একই সঙ্গে সুন্দরবন এবং মংলা বন্দর বাঁচাতে হলে মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল খনন ও পুনর্খনন করা ছাড়া বিকল্প নেই। আর এই চ্যানেল ঠিক রাখতে হলে এর সাথে ১৪০টি সংযোগ নদী-খাল সচল রাখতে হবে। এজন্য সব খাল খনন ও অবৈধ বাঁধ অপসারণ করতে হবে। এলাকার চিংড়ি চাষ পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে। নদী-খাল আটকে এই চিংড়ি চাষ করতে দেওয়া যাবে না। জৌখালী সাব-প্রজেক্টের অকেজো স্লুইচগেট অপসারণসহ প্রজেক্টভুক্ত ১১০ কিলোমিটার নদী-খাল খনন কাজ অব্যাহত রাখার দাবি জানানো হয়।

বক্তারা বলেন, দাউদখালী নদী ও এর সংযোগকারী খালসমূহের অবৈধ দখলের কারণে ঘষিয়াখালী চ্যানেলটি ভরাট হয়ে গেছে। ফলে শেলা নদী হয়ে নৌযান চলাচল করে। সেখানে তেল ট্যাংকার দুর্ঘটনায় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয়।

রামপাল উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি, কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ (সিডিপি), আন্তর্জাতিক মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল রক্ষা সংগ্রাম কমিটি, সার্বিক মানব উন্নয়ন সংগঠন-কারিতাস, পিপলস্ রাইট ভয়েস (পিআরভি)-এর যৌথ উদ্যোগে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন রামপাল উপজেলা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক মো. বজলুর রহমান, মংলা ঘোষিয়াখালী চ্যনেল রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এম এ সবুর রানা, সিডিপির বিভাগীয় সমন্বয়কারী এস এম ইকবাল হোসেন বিপ্লব, কারিতাসের উপজেলা মাঠ কর্মকর্তা হারুন গাজী, জাসদ নেতা শেখ আফজাল হোসেন, নবলোকের ভিলেজ প্রকল্প কর্মকর্তা পল্লব রায়, প্রবীর বিশ্বাস, মো. সোহরাব হোসেন, মিলন মন্ডল, সুভাষ মন্ডল, নাহার বেগম, কৃষ্ণা রানী দে, শাহনাজ সুলতানা পলিসহ অন্যরা।