শেরপুর থেকে হাকিম বাবুল: ‘চে..লে..লে.লে..ঢুঁই, চে..লে..লে.লে..ঢুঁই, ঢুঁই’-ধ্বনিতে হাঁক ডাক চলে গাঙ্গীবীরের হাত ধরে তার প্রতিদ্বন্দ্বী খুঁজতে। কেউ একজন এগিয়ে এলে তার সাথে চলে ওই গাঙ্গীবীরের গাঙ্গী খেলা। তিন মিনিটের গাঙ্গী খেলায় যিনি জয়ী হন তাকে নিয়ে আবারো একইভাবে হাঁক ছেড়ে খোঁজা হয় পরবর্তী প্রতিদ্বন্দ্বী। গাঙ্গী খেলা পৌষমেলার প্রধান আকর্ষণ।
এভাবেই একের পর একজন গাঙ্গীবীরের প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্য দিয়ে নির্ধারিত হয় গাঙ্গী খেলার চূড়ান্ত বিজয়ী।
গাঙ্গী খেলা কোথাও ‘কুস্তি’ আবার কোথাও ‘বলি খেলা’ নামে পরিচিত। তবে শেরপুরে পৌষমেলার প্রধান আকর্ষণ এই ‘গাঙ্গী খেলা’। বড়, মাঝারি ও ছোট- এ তিনটি গ্রুপে অনুষ্ঠিত হয় গাঙ্গী খেলা।
শেরপুর শহরের নবীনগর ছাওয়াল পীরের দরগা সংলগ্ন বিশাল খোলা মাঠে ২ জানুয়ারি বসেছিল ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা। পৌষমেলায় গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী গাঙ্গী খেলা ছাড়াও ঘোড়দৌড়, সাইকেল রেস, তৈলাক্ত কলাগাছে ওঠা এবং ভলিবল খেলাসহ বিভিন্ন ধরনের খেলা অনুষ্ঠিত হয়।
মেলার অন্য আকর্ষণ ছিল- বিভিন্ন পিঠা ও গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মজাদার খাবারের দোকান। পাশের পালপাড়া এলাকার মৃৎশিল্পীদের হাতে তৈরি করা নানা ধরনের খেলনা-তৈজষপত্র। এছাড়াও শিশুদের খেলনা, মেয়েদের প্রসাধনী, চুড়ি-মালার দোকানের পসরা সাজিয়ে বসে দোকানিরা। গ্রামীণ ঐতিহ্যের চিনির তৈরি সাজ, উরফা, কদমা, বাতাসা, নিমকি কালাই, খুরমা, ঝুরি, মিষ্টি এবং বিভিন্ন মুখরোচক খাবারের দোকান ছিল সারি সারি।
শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষের উপচে পড়া ভীড়ে পৌষমেলা ছিল জমজমাট। রাতে দরগাহ প্রান্তরে আয়োজন করা হয় বাউল গানের আসর।
মেলা আয়োজক কমিটির সমন্বয়কারি মীর মজনু জানান, নবীনগর এলাকাবাসী প্রায় ৬২ বছর ধরে এ মেলার আয়োজন করে আসছে। প্রতি বছর ছাওয়াল পীরের দরগাহ সংলগ্ন মাঠে বাংলা পৌষ মাসের শেষদিন এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এ বছর কৃষকদের আগাম ফসল প্রস্তুতির কারণে কয়েকদিন আগেই পৌষমেলার আয়োজন করা হয়েছে।
বিভিন্ন খেলা শেষে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার তুলে পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও নবীনগর ফাউনেডশনের সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম। এ সময় নবারুণ শিক্ষা পরিবারের পরিচালক আনোয়ারুল হাসান উৎপল, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি জুনায়েদ নূরানী মনি এবং গণ্যমাণ্যরা উপস্থিত ছিলেন।