কুলাউড়ায় ট্রেন দুর্ঘটনায় ২৫ জন আহত, সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ

মৌলভীবাজার থেকে আজিজুল ইসলাম: কুলাউড়া উপজেলার মনু ও টিলাগাঁও স্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানে উদয়ন এক্সপ্রেসের ছয়টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছে। আজ ভোররাতে (আনুমানিক সাড়ে ৩টায়) ট্রেনটি দুর্ঘটনায় পড়ে।

সিলেট থেকে ছেড়ে আসা উদয়ন এক্সপ্রেস চট্টগ্রাম যাচ্ছিল। এতে বিভিন্ন গন্তব্যের ৫০০ যাত্রী ছিল। দুর্ঘটনার পর থেকে সারাদেশের সঙ্গে সিলেটের ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

যান্ত্রিক কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে রেলওয়ের দুজন প্রকৌশলী এর পেছনে নাশকতার আশংকা করছেন।

Kulaura  train line out pic (8)
দুর্ঘটনাকবলিত উদয়ন এক্সপ্রেস।

কুলাউড়া জংশনের স্টেশন মাস্টার মির্জা মো. শামসুল ইসলাম জানান, সিলেট থেকে রাত সাড়ে ১০টায় ট্রেনটি ছেড়ে আসে। মাইজগাঁও স্টেশনে আসার পর ট্রেনটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। ত্রুটি সারানোর পর রাত ৩টায় ট্রেনটি কুলাউড়া পৌঁছায়। কুলাউড়া ছেড়ে যাওয়ার পর রাত আনুমানিক সাড়ে ৩টায় টিলাগাঁও ও মনু রেলওয়ে স্টেশনের মাঝখানে  ট্রেনটি দুর্ঘটনায় পড়ে।

স্টেশন মাস্টার আরো জানান, ট্রেনের ইঞ্জিনসহ ছয়টি বগি লাইনচ্যুত হয়। দুটি বগি পাশের জমিতে গিয়ে পড়ে। এতে কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়। আহতদের কুলাউড়া ও মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

আহত যাত্রী শাহাদাত হোসেন শুভ, সেলিনা খাতুন, রওসনা খাতুন, জয়নাল আবেদীন ও ট্রেনে কর্তব্যরত রেলওয়ে জিআরপি পুলিশ বোরহান জানান, ট্রেনটি মাইজগাঁও স্টেশনে আসার পর ইঞ্জিনের পেছনের বগিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। মাইজগাঁও স্টেশনে প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা ট্রেনটি আটকে মেরামত করা হয়। ট্রেনের দুটি বগির মাঝখানে তার বেঁধে জোড়া লাগানো হয়। মাইজগাঁও স্টেশন ছাড়ার পর থেকেই বগির যাত্রীরা আতঙ্কে ছিলেন।

কুলাউড়া স্টেশন ছাড়ার পর বেশিরভাগ যাত্রী ইঞ্জিনের পেছনের বগি থেকে সরে যান। লাইনচ্যুত হওয়ার আগে বিকট শব্দ হয় বলে যাত্রীরা জানান।

খবর পেয়ে সিলেট, মৌলভীবাজার ও কুলাউড়া থেকে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট, কুলাউড়া থানা পুলিশ, রেলওয়ে জিআরপি থানা পুলিশ দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে। কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, পুলিশ সুপার মো. তোফায়েল আহমদ, সহকারী পুলিশ সুপার জুনায়েদ আলম সরকার, অফিসার ইনচার্জ অমল কুমার ধর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সকাল ৭টায় একটি রিলিফ ট্রেন এসে উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। দুর্ঘটনায় রেললাইনের ২০ ফুট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে দুর্ঘটনার পর শমসেরনগর ও শ্রীমঙ্গলে স্টেশনে চট্রগ্রাম ও ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ট্রেন আটকা পড়েছে। অপরদিকে কুলাউড়া স্টেশনে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা কয়েকটি ট্রেন আটকা পড়ে আছে।

যান্ত্রিক কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করেন ট্রেনের চালক কবির। একই অভিমত কুলাউড়া জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গির হোসেনেরও। তবে ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (ম্যাকানিক) শ্রীপদ দত্ত ও ঊর্ধ্বতন সহকারী প্রকৌশলী (পথ) এরফানুর রহমান দুর্ঘটনার পেছনে নাশকতার আশংকা করছেন।

কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ অমল কুমার ধর জানান, নাশকতার কোনো সম্ভাবনা নেই। রেললাইন ও যান্ত্রিক ত্রুটিই দুর্ঘটনার কারণ হতে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নাজমুল হাসান জানানও বলেন- এটা কোনো নাশকতা নয়। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই দুর্ঘটনা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।