অবরোধে ঈশ্বরদীতে সবজির দাম পড়ে গেছে: কোটি কোটি টাকা লোকসানের আশংকা

ঈশ্বরদী (পাবনা) থেকে স্বপন কুমার কুন্ডু: টানা অবরোধে উত্তরাঞ্চলের অন্যতম সবজি উৎপাদনকারী এলাকা ঈশ্বরদীতে শীতকালীন সবজির দাম পড়ে গেছে।
শুক্রবার (৯ জানুয়ারি) ১৫ টাকা কেজির শিম ৮ টাকায়, ১২ টাকার ফুলকপি ৩ টাকা ও বেগুন মাত্র ৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
সবজির দর পড়ে যাওয়ায় কৃষকদের কোটি কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। গত দু’দিন ঈশ্বরদীর পৌর মার্কেট, জয়নগর, সাহাপুর, ছলিমপুর, মুলাডুলি, মানিকনগর, মিরকামারী, আওতাপাড়া এলাকায় কৃষক ও বিভিন্ন আড়তে খোঁজ নিয়ে এরকম লোকসানের আভাস পাওয়া যায়।
সবজির ভরা মৌসুমে ঈশ্বরদীতে উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, মুলা, গাজরসহ শাক-সবজি প্রতিদিন বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ হয়ে থাকে।
গত দু বছরও হরতাল এবং অবরোধে কৃষকরা তাদের সবজি বাজারজাত করা নিয়ে বিপদে পড়েন। হরতাল-অবরোধের ফলে তাদের বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি হয়।
মুলাডুলি আড়তে এসময় প্রতিদিন ৬০-৭০ ট্রাক শিম বাজারজাত হয়ে থাকে। অবরোধে এ আড়তে অন্তত ২০ কোটি টাকার শিম কেনা-বেচা হয়নি বলে আড়তদাররা দাবি করেছেন। ৬০০ টাকা মণের শিমের দাম এসে ঠেকেছে ৩০০-৩৫০ টাকায়।
কৃষকরা জানান, জমি হতে ধারাবাহিকভাবে শিম তোলার নিয়ম। মৌসুমে প্রতিদিনই নিয়মমতো শিম তোলা হয়। নিয়ম করে না তুললে শিম বেশি পোক্ত ও কালো হয়ে খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে যায়। আবার কচি শিমের বড় হওয়া এবং ফুল হতে শিম বের হওয়াও বাধা পায়। এতে ফলন কমে যায়।
দিয়াড় সাহাপুর গ্রামের রিয়াজ উদ্দিন সরদার বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ফুলকপি চাষ করেন। তিন জানান, ঈশ্বরদীতে এবার ফুলকপি ও বাঁধাকপির ব্যাপক ফলন হয়েছে। আড়তদাররা জানান, প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি টাকার কপি ঢাকার কাওরানবাজারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়। এখানে প্রতি কেজি ১২ টাকা অর্থাৎ ৪৮০-৫০০ টাকা মণ দরে পাইকারি বাজারে কপি বিক্রি হচ্ছিল। এখন ক্রেতা না থাকায় ফুলকপির মণ বিক্রি হচ্ছে ৮০-১২০ টাকা দরে। জমির বেশির ফুলকপি এখন পোক্ত হয়েছে। এগুলো সময়মতো না তুললে নষ্ট হয়ে যাবে। এতে কৃষকের অপূরণীয় ক্ষতি হবে।
ঈশ্বরদীর আরেকটি প্রধান ফসল বেগুনের দর পড়ে ৫০০-৫৫০ টাকা থেকে ২০০-২৫০ টাকায় নেমে এসেছে। এ ধরনের সবজি সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা ঈশ্বরদীতে নেই।
গাজর, মুলা, পালং শাক,বরবটিসহ অন্যান্য শাক-সবজিরও খদ্দের পাওয়া যাচ্ছে না।
কৃষকরা জানান, এনজিওর ঋণ ও স্থানীয় দাদন নিয়ে, জমি লিজ নিয়ে তারা এসব ফসল ফলিয়েছেন। শীতকালীন সবজি থেকে বাড়তি আয় করবেন বলে কৃষকরা সারা বছর আশা করে থাকেন। আর এখন বাজার পড়ে যাওয়ায় ঋণ পরিশোধ নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।
সবজি চাষের সাথে অন্তত কৃষি শ্রমিক, আড়তদার, ফড়িয়া, কুলি, পরিবহন শ্রমিকসহ প্রায় ৫০ হাজার মানুষ জড়িত।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খুরশীদ আলম জানান, অনেক সময় প্রাকৃতিক কারণে সবজি চাষে ক্ষতি হয়। এত ফলন কমে গেলেও দাম বেশি পাওয়ায় কৃষক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে। কিন্তু কৃষকের এই বিপুল ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার আর কোনো উপায় আছে কি-না তা তার জানা নেই। এরমধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা লোকসান হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।