বরিশাল থেকে এম. মিরাজ হোসাইন: বিশ দলীয় জোটের ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধের প্রভাবে বরিশালের সহস্রাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠান বড় ধরনের সংকেট পড়েছে। টানা সাত দিনের অবরোধে শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল আমদানি ও উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে না পারায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
অবরোধের কারণে এখন বরিশালের প্রথম সারির শিল্প প্রতিষ্ঠান অলিম্পিক সিমেন্ট, সোনারগাঁও টেক্সটাইল মিলস, অপসোনিন ফার্মা, কেমিস্ট ল্যাবরেটরিজ, রেফকো ফার্মাসিউটিক্যালস, অমৃত ফুড প্রডাক্টস, এমইপি, বেঙ্গল বিস্কুট, গ্লোবাল ক্যাপসুলসহ ছোট-বড়-মাঝারি সহস্রাধিক প্রতিষ্ঠান বিপাকে পড়েছে।
সুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সোনারগাঁও টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড তুলা আমদানি করতে না পারায় শনিবার তাদের কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, টেক্সটাইল, ফুড প্রডাক্টস, ইলেকট্টনিক্স পণ্য, ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিসহ উৎপাদনের জন্য প্রায় প্রতি সপ্তাহেই কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। আমদানির জন্য দেশ-বিদেশ থেকে তুলা, তরল ও পাউডারজাত দ্রব্য আমদানি করতে হয় তাদের। এরমধ্যে প্রতিবেশী দেশ ভারত এবং চীন থেকে তুলা ও অ্যাসিড আমদানি করা হয়। ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে ময়দা, চিনিসহ ক্যামিক্যাল আমদানি করে। বিস্কুট, রুটিসহ বিভিন্ন ধরণের পণ্য তৈরি করে বাজারজাত করে অনেক প্রতিষ্ঠান। ট্রাক ও কার্ভাড ভ্যান, মিনি ট্রাক, পিকভ্যানযোগে সড়ক পথে এসব কাঁচামাল বন্দর থেকে বরিশালে আনা হয়।
এদিকে মাছ ব্যবসায়ও ধস নেমেছে। প্রতিমাসে বরিশাল থেকে প্রায় ৩০০ টন বিভিন্ন ধরণনর মাছ রপ্তানি করা হয়। বৃহত্তর বরিশাল থেকে সড়ক পথে উত্তরাঞ্চল, রাজধানী শহরসহ ভারতে ইলিশ ও চাষ করা মাছ রপ্তানি করা হয়।
বরিশাল মৎস্য আড়তদার সভাপতি অজিত কুমার দাস (মনু বাবু) জানান, অবরোধের কারণে ট্রান্সপোর্ট পাওয়া যায় না। রাস্তায় ট্রাক নামলেই আগুন দেয়া হয়। প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে কেউ গাড়ি চালাতে চায় না। দু-একটি ট্রান্সপোর্ট তাদের ট্রাক, কার্ভাডভ্যান চালালেও ভাড়া স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি হওয়ায় মাছ রপ্তানি করতে পারছি না। বরিশালে মাছ সংরক্ষণের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় পচে যাওয়ার ভয়ে কেনা দামের চেয়ে অর্ধেক দামে মাছ বাধ্য হয়ে বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। এতে মাছ ব্যবসায়ীরা মোটা অংকের লোকসানে পড়ছে।
কাঁচামাল আড়তদার মালিক সমিতির ব্যবসায়ী এনায়েত হোসেন বলেন, ভোমরা, বেনাপোলসহ সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে আলু, পিঁয়াজ, রসুন আমদানি করে বরিশালের ব্যবসায়ীরা। অবরোধের কারণে পণ্য পরিবহন বিঘ্নিত হচ্ছে। আবার এমনও দেখা গেছে ট্রাকযোগে পণ্য নিয়ে বরিশালে আসার পথে পথিমধ্যে ট্রাক পিকেটারের হামলার শিকার হচ্ছে।
অনির্দিষ্টকালের ডাকা অবরোধে ব্যবসা-বাণিজ্যের অচলাবস্থার ব্যাপারে বরিশার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, অবরোধের কারণে পণ্য পরিবহনে কিছুটা ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রান্সপোর্ট মালিকরা তাদের ট্রাক, কাভার্ডভ্যান বন্ধ রাখার ব্যাপারে তিনি আরো বলেন, এখন তো সমস্যা নেই প্রধানমন্ত্রির পক্ষ থেকে ক্ষতি পূরণ দেয়া হবে বলে ঘোষণা এসেছে।
পণ্য উৎপাদনে কাঁচামাল আমদানিতে অবরোধের প্রভাবের ব্যাপারে বরিশালের সর্ববৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান অলিম্পিক সিমেন্ট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুর রব শাহিন বলেন, কাঁচামাল আনার ক্ষেত্রে আমাদেরকে বেশিরভাগ সময়ই নৌপথ ব্যবহার করতে হয়। সেক্ষেত্রে তেমন কোনো প্রভাব পড়ছে না। উৎপাদন শেষে পণ্য সরবরাহ করতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে । তার পর কৌশলে চলছে সরবরাহের কাজ।
সুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সোনারগাঁও টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড তুলা আমদানি করতে না পারায় গতকাল তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে। গতকাল টেক্সটাইলটির প্রকল্প পরিচালক স্বাক্ষরিত এক নোটিশ দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মজিবর রহমান বলেন উৎপাদনের জন্য প্রধান কাচামাল তুলা সরবরাহ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। ফলে শ্রমিক-কর্মচারীরা কর্মহীন সময় কাটাচ্ছে । যে কারণে আপাতত লে-অফ ঘোষণা করা হয়েছে।