ধনবাড়ী থেকে আব্দুল্লাহ্ আবু এহসান: মর্জিনা টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার কুড়িপাখি গ্রামের দিনমজুর মোবারক হোসেনের মেয়ে। মর্জিনা যখন ক্লাস এইটের ছাত্রী তখন তার বিয়ে হয়। ২০১২ সালের জুন মাসে। পাত্র ব্রাহ্মণবাড়ি গ্রামের শাহজাহান আলী। পেশায় দর্জি।
এক লাখ টাকা যৌতুকে মর্জিনার বিয়ে হয়। বিয়ের পর প্রথম কয়েক মাস ভালোই যাচ্ছিল। কিন্তু বছর না যেতেই বদলে যেতে থাকে স্বামী শাহজাহান আলী। নতুন করে যৌতুকের দাবি তোলে। দরিদ্র বাবা ধার-দেনা করে ৪০ হাজার টাকা তুলে দেন জামাইয়ের হাতে।
বিয়ের বছরখানেকের মাথায় মর্জিনা সন্তানসম্ভবা হয়। স্বামী বলে, ছেলে চাই। শ্বশুরবাড়ির অন্যরাও এরকম আবদার করে বসে।
সবার বায়নাকে অমান্য করে গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মর্জিনার কোল আলো করে আসে এক কন্যা শিশু। কিন্তু নবজাত শিশুটির আগমন তার পিতৃপক্ষের একরোখা মানুষদের অভিনন্দন পায় না।
মর্জিনা অভিযোগ করে, সন্তানের জন্মের পর স্বামী আর তার পরিবারের লোকজনের আচরণ পাল্টে যায়। গায়ে হাত তোলাসহ তাকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন শুরু তারা। দিন দিন নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকে।
নির্যাতন সইতে না পেরে বাপের বাড়ি চলে আসে মর্জিনা। তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। একসময় বুকের দুধ পায় না কন্যাটি। দরিদ্র নানা ছোট্ট নাতনিটিকে নিয়ে বিপদে পড়েন।
অনেক বলে-কয়ে মর্জিনাকে শ্বশুরবাড়ি পাঠায় বাবা। এবার নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। স্বামী অন্য এক নারীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। প্রতিবাদ করায় অনেকটা জোর করেই মর্জিনাকে আবার বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেয় স্বামী।
গত ২৩ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে মর্জিনার বাবার ঠিকানায় তালাকনামা এসে পৌঁছায়। মর্জিনার অভিযোগ, তার বাবা খুবই গরিব। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে মর্জিনা সবার ছোট। মেয়ের সুখের আশায় সর্বস্ব খুইয়ে বাবা বিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু তার সন্তানকে উছিলা করে স্বামী তার সাথে অন্যায় আচরণ করেছে।
ফয়সালার আশায় মাতব্বর ও জনপ্রতিনিধিদের দুয়ারে দিনের পর দিন ঘুরেছেন মর্জিনা। কিন্তু তার সহায়তায় কেউ এগিয়ে আসেনি।
মোবারক হোসেন মিনতি করে বলেছেন, ভাইরে আমি এক্কেবারে গরিব মানুষ। আমার মাইয়্যাডারে কেউ বাঁচান।
মর্জিনার বাবা এখন উপজেলার একটি মানবাধিকার সংস্থার দ্বারস্থ হয়েছেন। সংস্থাটির মধুপুর প্রতিনিধি সার্জেন্ট (অবঃ) গোলাম কিবরিয়া ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, একবিংশ শতাব্দীতে এখনো কন্যা সন্তান প্রসব করার অভিযোগে স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ঘটনা অবাক লাগে। সালিশি বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি নিস্পত্তির জন্য শাহজাহানকে সংস্থা থেকে তিনবার নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। মর্জিনা যাতে বিনা খরচায় আইনি সহায়তা পায় সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান গোলাম কিবরিয়া।