স্বেচ্ছাশ্রমে কুলাউড়ার গুঙ্গিজুড়ি খাল খনন: কৃষকদের মনে আনন্দের ঢেউ তুলে জল এল মরা খালে

মৌলভীবাজার থেকে আজিজুল ইসলাম: এলাকাবাসীর নিজেদের উদ্যোগে কুলাউড়ায় সাত কিলোমিটার খাল খনন সম্পন্ন হয়েছে। মৃতপ্রায় খালটি পুনরুজ্জীবিত হওয়ায় হাকালুকি হাওরের দক্ষিণ তীরের কয়েক হাজার হেক্টর জমি বোরো মৌসুমে সেচ সুবিধা পাবে।

পরিশ্রমের পাশাপাশি উপজেলার ভুকশিমইল ইউনিয়নের গুঙ্গিজুড়ী খালের খননের সকল খরচাও বহন করেছে এলাকাবাসী। এলাকায় আনন্দের হিল্লোল বইয়ে দিয়ে বৃহস্পতিবার (২২ জানুয়ারি) খালটিতে পানি প্রবাহ শুরু হয়।

Kulaura pic (2)
কুলাউড়ার সাত কিলোমিটার দীর্ঘ গুঙ্গিজুড়ী খাল দিয়ে আসছে পানি।

সরেজমিন হাকালুকি হাওরে দক্ষিণ তীরে গিয়ে দেখা যায় স্থানীয়রা বেশ আনন্দিত। মজে যাওয়া গুঙ্গিজুড়ী খাল দিয়ে বুক সমান পানি আসছে তর তর করে। হাওর তীরের কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ইউনিয়নের ভুকশিমইল, মহেষগৌরী, মদনগৌরী, গৌড়করণ, কুরবানপুর গ্রামের মানুষদের ধানক্ষেতের জন্য আর সেচের সংকট থাকছে না।

এছাড়া চলতি বোরো মৌসুমে সেচ সুবিধা পাবে শশারকান্দি, কুরবানপুর, নবাবগঞ্জ, মীরশংকর,  দৌলতপুর  ও শাহাপুরের আংশিক মৌজার কয়েক হাজার কৃষক। শুধু তাই নয় হাকালুকি হাওরের গৌড়কুড়ি বিলসহ আশপাশের কয়েক হাজার হেক্টর জমি আগামী বোরো মৌসুমে চাষের আওতায় আসবে।

ভুকশিমইল গ্রামের হাজী তারা মিয়া, আমিন উদ্দিন, ইলাছ মিয়া, মহেষগৌরী গ্রামের নামর আলী, আজাদ মিয়া, গৌড়করণ গ্রামের মজমিল মিয়া, সাবেক মেম্বার আব্দুল হারিছ, শওকত মিয়া, কুরবানপুর গ্রামের চিনু মিয়াসহ অনেকের কাছ থেকে জানা যায়, এ এলাকার কৃষকেরা একমাত্র বোরো মৌসুমে ধান চাষ করে। হাওর তীরের মানুষ হলেও পানি সংকটের কারণে প্রতিবছর ধান চাষ ব্যাহত হয়।

স্থানীয় প্রশাসনসহ বিভিন্ন দফতরে যোগাযোগ করে হতাশ হন এলাকার মানুষ। সেই হতাশা থেকে কিছু একটা করার জেদ চাপে মানুষের মনে। সেই থেকে পারস্পরিক যোগাযোগ করে পাঁচ গ্রামের মানুষ সিদ্ধান্ত নেন খাল খননের। জুড়ী উপজেলার কন্টিনালা থেকে হাওরের বুক চিরে দীর্ঘ সাত কিলোমিটারের বেশি খাল খনন কাজ স্বেচ্ছাশ্রমে করাটা দুরূহ কাজ। স্থানীয় লোকজন যারা প্রবাসে অবস্থান করছেন তাদের সাথে যোগাযোগ করে এবং স্থানীয় লোকজন নামেন অর্থসংগ্রহে। ভাল উদ্যোগকে সফল করতে দল-মত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ নিজেদের সামর্থ্য অনুসারে সহযোগিতার হাত বাড়ান। শুরু হয় মাটি কাটার মেশিন (এস্কেবেটর) দিয়ে খনন কাজ।

সেই সাথে কাজের সার্বক্ষণিক তদারকি জন্য প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ জন লোক স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করেন। ১৯ দিন পর মানুষের স্বপ্ন বাস্তব রূপ লাভ করে। খাল দিয়ে যখন বুক সমান পানি আসছিলো, তখন কৃষকের বুকটাই যেন ভরে গিয়েছিলো আনন্দে।

সবার একটাই কথা এখন আর চোখের সামনে বোরো ক্ষেতে খরায় পুড়ে যাওয়া দেখতে হবে না। বরং মানুষ পতিত জমিকে বোরো আবাদের স্বপ্ন দেখছে। মানুষের মহতি উদ্যোগ পাল্টে দিতে পারে একটি এলাকার দৃশ্যপট। তাই প্রমাণ করলো কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ইউনিয়নের সর্বস্তরের মানুষ।