হরতাল-অবরোধে সংকটে মৌলভীবাজারের চা শিল্প

মৌলভীবাজার থেকে আজিজুল ইসলাম : চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা আর হরতাল-অবরোধে মৌলভীবাজারের চা শিল্পে ধস নামার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাগানের উৎপাদিত চা পরিবহন সংকটে চট্রগ্রাম ওয়্যার হাউজে পাঠানো যাচ্ছে না। অন্যদিকে জ্বালানি সংকট, বিশেষ করে ডিজেল সংকটের কারণে বাগানগুলিতে পানির পাম্প না চলার কারণে বাগানে লাগানো ইয়াং টি মরে যাচ্ছে। শ্রমিকদের রেশন ও মজুরি দিতেও হিমশিম খাচ্ছে চা বাগান কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন চা বাগানের দায়িত্বশীলদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।

Plucking_tea_from_garden_beautifulbangladesh
দেশের সবচেয়ে বেশি চা বাগান মৌলভীবাজার জেলায়। দেশের ১৫২টি চা বাগানের মধ্যে মৌলভীবাজার জেলায় চা বাগানের সংখ্যা ৯২টি। এরমধ্যে কুলাউড়ায় ২২টি, শ্রীমঙ্গলে ২৮টি, বড়লেখায় ১৪টি, জুড়ীতে আটটি, রাজনগরে ১১টি এবং কমলগঞ্জে ১৬টি চা বাগান রয়েছে। মৌলভীবাজারের উৎপাদিত চা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হয়। বিশেষ করে জেলার গ্রীন টি’র কদর বিশ্বব্যাপী।

কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে জেলার বাগানগুলোতে জ্বালানি সংকটের কারণে সেচ বন্ধ থাকায় নতুন লাগানো চা গাছ (ইয়াং টি) মারা যাচ্ছে। পরিবহনের অভাবে উৎপাদিত চা চট্রগ্রামের ওয়্যার হাউজে নিলামের জন্য পাঠানো যাচ্ছে না। পরিবহনের অভাবে রেশন আনতে না পারায় শ্রমিকদের রেশন দেয়া যাচ্ছে না এবং চা নিলাম না হওয়ায় টাকার অভাবে শ্রমিকদেরকে বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে বাগান কর্তৃপক্ষ।

রোজ টি কোম্পানির মালিকানাধীন রাঙ্গিছড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক ওয়াহিদউজ্জামান জানান, অবরোধের কারণে বাগানে আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থা সিলেটের সবকটি চা বাগানে। এ সমস্যা দ্রুত নিরসন না হলে চা শিল্পে তীব্র সঙ্কট দেখা দিবে।
ইস্পাহানী গ্রুপের মালিকানাধীন গাজিপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপক কাজল মাহমুদ জানান, তাদের নিজস্ব পরিবহন থাকায় পূর্বে উৎপাদিত চা চট্রগ্রাম ওয়্যার হাউজে নিলামের জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে বর্তমানে জ্বালানি সংকটের কারণে বাগানের সেচ পাম্পগুলি বন্ধ রয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে নয় হাজার লিটার ডিজেল প্রয়োজন। কিন্তু ডিপো থেকে তেল না দেওয়ায় সেচ পাম্প চালানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ইয়াং টি মারা যাচ্ছে। তাছাড়াও পরিবহন সমস্যার কারণে শ্রমিকদের রেশন আনা যাচ্ছে না। এ অবস্থা আরও কিছুদিন চলতে থাকলে চা শিল্পে ভয়াবহ সঙ্কট দেখা দেবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

এ ব্যাপারে লংলা ভ্যালীর চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, অবরোধের কারণে পরিবহন সমস্যায় বিভিন্ন বাগানের উৎপাদিত চা চট্রগ্রাম নিলামে পাঠাতে না পেরে কিছুটা সমস্যা রয়েছে। তবে কী পরিমাণ বাগান ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তা আগামী সভায় নিরূপণ করে এর প্রতিকারে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট দেয়া হবে বলে তিনি জানান।