কলাপাড়ায় সালিশ বৈঠক শেষে হামলায় আহত ২০, বাড়িঘর তছনছ, লুটপাট

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) থেকে মিলন কর্মকার রাজু: জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র কওে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মধুখালী গ্রামে সালিশ বৈঠকেই এক পক্ষ অপর পক্ষকে হামলা করে এবং পরে পাঁচ কৃষকের বাড়ি-ঘর কুপিয়ে তছনছ ও লুটপাট করে। এ সময় তাদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মহিলাসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।

খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে ও আহতদের উদ্ধার করে কলাপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করে। আহতরা হলেন, বেল্লাল প্যাদা, রাজ্জাক প্যাদা, সবুজ, লালু প্যাদা, হাজেরা বেগম, বেলোয়ারা বেগম, রাজিব, রফিকুল ইসলাম কিশোর, রেহেনা বেগম, সরোয়ার, মাসুম ও সেনাবাহিনী সদস্য জাহিদুল ইসলাম। অপর আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। পুলিশ এ ঘটনায় ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে।

কলাপাড়ার মধুখালী গ্রামে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত সেনাবাহিনী সদস্য জাহিদুল ইসলাম ও রাজিবের নেতৃত্বে ৪০/৪৫ জনের দল এ হামলা চালায় বলে আহতরা জানান। এ সময় শতশত গ্রামবাসী একজোট হয়ে জাহিদুল ইসলামসহ ৩/৪ জনকে আটক করে গণধোলাই দেয়।

এ ঘটনায় শুক্রবার (৩০ জানুয়ারি) জাহিদুল ইসলামসহ ৪৫ জনের নাম উল্লেখ করে ৯৫ জনের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি দুটি মামলা হয়েছে। পুলিশ এ ঘটনায় নয়জনকে আটক করেছে। আটককৃতরা হলেন আরিফ, রুবেল, জাহিদুল, রুবেল দফাদার, জুলহাস তালুকদার, রাকিবুল, রাজ্জাক প্যাদা, লালু প্যাদা ও বেল্লাল প্যাদা। আহত সেনাবাহিনী সদস্য জাহিদুল ইসলামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়া হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার (২৯ জানুয়ারি) সকালে রাজ্জাক প্যাদা ও নুরু প্যাদার মধ্যে জমি সংক্রান্ত একটি মামলার ঘটনায় পূর্ব মধুখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ইউপি সদস্য আ: জলিলের উপস্থিতিতে একটি সালিশ বসে। সালিশে রায় দেয়ার আগেই কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে জাহিদুল ইসলাম অতর্কিত হামলা করে রাজ্জাক প্যাদা ও তার ছেলে আনোয়ার প্যাদাকে আহত করে। এরপরই বালিয়াতলী থেকে ৩০/৩৫টি মোটর সাইকেলে ৪০/৪৫ জনের একটি দল গ্রামবাসী ও তাদের বাড়িঘরে হামলা করে। এ সময় তারা রফিকুল ইসলাম প্যাদা, লালু প্যাদা, রাজ্জাক প্যাদা, ইব্রাহিম প্যাদা ও বাবুল প্যাদার ঘর ও ঘরের মালামাল কুপিয়ে তছনছ করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে নেয় বলে অভিযোগ করা হয়।

KALAPARA PIC-01  KALAPARA PIC-2 KALAPARA PIC-6(30.01.2015).HAMLA
পাঁচ কৃষকের বাড়ি-ঘর কুপিয়ে তছনছ ও লুটপাট করা হয়

রফিকুল ইসলাম প্যাদার স্ত্রী আতরজান বিবি বলেন, “মুই ঘরে রানতে আছেলাম। হঠাৎ দেহি জাহিদুল, রাজিবসহ ৩০/৩৫ জন পোলাপান বল্লার মতো আইয়া মোর ঘরডা দুই/তিন মিনিটেই কোপাইয়া ফালাফালা কইর‌্যা ফালাইছে। কিচ্ছু নাই। ভাতের পাইলা, থালা, বাডি সব দুই/তিন খন্ড”। তিনি আরও বলেন, “বিয়া হইছে পাঁচ বছর। ঘরে দুধের পোলা বাহাউদ্দিন (২)। এ্যাতোদিন মাইনষের ঘরে আছিলাম। দুই মাস আগে ব্যাংক থেইক্যা ১০ হাজার টাহা উডাইয়া ঘরডা তোলছেলাম। দুই মাস থাকতে পারলাম না। হ্যারা হ্যারা জমি নিয়া বিরোধ। মুই ও মোর ঘরডা কি ক্ষতি করছে কন। এই শীতে এ্যাহন মোরা কই যামু?”

আনোয়ার প্যাদার স্ত্রী খাদিজা জানান, “মোর কোলের পোলাডারে (তরিকুল) টাইন্যা নিয়া খুন করতে চাইছে। মুই কোনরহম জানডা নিয়া দৌড় দিছি। কিন্তু যহন ঘরে আইছি দেহি কিচ্ছু নাই। কোপাইয়া সব ফালাফালা কইর‌্যা দেছে।”

স্থানীয় গ্রামবাসী রশিদ প্যাদা জানান, “ব্রিটিশ,পাকিস্তানীগো হামলা দেখছি। এই রহম মাইনষে করতে পারে তা কল্পনাও করি নাই”। মাদ্রাসা শিক্ষক শামসুল হক জানান, “গ্রামবাসীরা যদি একজোট না হইতো তাহলে গোটা মধুখালী গ্রামই মনে হয় সন্ত্রাসীরা শেষ কইর‌্যা দিতো”।

সেনাবাহিনী সদস্য জাহিদুল ইসলাম জানান, তিনি কোনো হামলা করেননি। উল্টো তাকে ও তার বাবা এবং ফুফুকে মারধর করেছে গ্রামবাসী। তাদের বসত ঘরে হামলা ও ভাংচুর করেছে।

ইউপি সদস্য আঃ জলিল জানান, জাহিদুল সালিশে হামলা না করলে ওইদিনই জমি নিয়ে বিরোধের ফয়সালা হতো।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কলাপাড়া থানার এসআই শামসুল আলম জানান, তারা এ ঘটনায় ৯ জনকে গ্রেফতার করেছেন। বাকিদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

কলাপাড়া থানার ওসি মো. আজিজুর রহমান জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় দুইটি মামলা হয়েছে। কলাপাড়া এএসপি সার্কেলসহ তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে কথা বলেছেন। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।