আতাউর রহমান মিন্টু: রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই-দাবিতে যে পাঁচ-ছয় জন সাহসী তরুণ জীবন উৎসর্গ করেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার। ১৯১৯ সালে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাঁচুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এই ভাষা শহীদ। তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে সরকারিভাবে তার নিজ গ্রামের নাম পরিবর্তন করে জব্বার নগর করার সিন্ধান্ত হলেও গত আট বছরেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এ কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শহীদের পরিবারসহ এলাকাবাসী।
জানা গেছে, ২০০৭ সালের ২৫ মার্চ স্থানীয় সরকার বিভাগের সভায় ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বারের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের উদ্দেশে তাঁর গ্রামের নাম পাচুঁয়ার পরিবর্তে জব্বার নগর করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। একই বছরের ৪ এপ্রিল স্থানীয় সরকার বিভাগের পক্ষ থেকে গ্রামের নাম পাচুঁয়ার পরিবর্তে জব্বার নগর নামকরণের বিষয়ে প্রস্তাব পাঠানোর জন্য ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু আট বছরেও সেই নির্দেশ বাস্তবায়ন হয়নি। গ্রামবাসী জানান, ২০০৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বারের নামে গ্রন্থাগার ও স্মৃতি যাদুঘরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসে তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আনোয়ারুল ইকবাল গ্রামের নাম জব্বার নগর বলে ঘোষণা দেন।
গ্রামের বাসিন্দা আবু সাঈদ জানান, এখনও জব্বার নগর হিসেবে পরিচিতি না পাওয়ায় তারা পূর্বের নামই ব্যবহার করেন। নাগরিকত্বসহ ইউপি থেকে দেওয়া নানা কাগজপত্রে গ্রামটিকে পাঁচুয়া হিসাবেই লেখা হচ্ছে।
স্থানীয় ইউপির চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন জানান, তারা কোন গেজেট পাননি। এ কারণেই গ্রামের নাম পাঁচুয়া লিখছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিদ্ধার্থ শংকর কুণ্ড জানান, ভাষা শহীদের গ্রামের নাম পরিবর্তন সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র তার কার্যালয়ে নেই।
এদিকে ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বারের পৈতৃক ভিটা এখন তার প্রতিবেশীদের দখলে। ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বারের পুত্র মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম বাদল জানান, তাঁর পিতার স্মৃতি বিজড়িত পৈতৃক ভিটা স্থানীয় কিছু ব্যক্তি জোর করে দখল করে রেখেছে। জব্বার নগরের বাসিন্দা ভারইল ছফির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক কামাল উদ্দিন অবিলম্বে গ্রামের নামকরণ জব্বারনগরেরর সরকারি গেজেট এবং গ্রামে ভাষা শহীদের নামে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি জানান।
ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার স্মৃতি কমপ্লেক্স থেকে গফরগাঁও- ভালুকা সড়কের ভারইল বাজার পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ এলজিইডির সড়কটি খানাখন্দে ভরা, চলাচলের অনুপযোগী। ২০০৮ সালে ১৮ ফেব্রুয়ারি পাচুঁয়া গ্রামে ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বারের বাড়ি সংলগ্ন স্থানে এলজিইডির তত্ত্বাবধানে ৬২ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার স্মৃতি যাদুঘর ও গ্রন্থাগার উদ্বোধন করেন ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন, ড. হালিমা খাতুন, বেগম রওশন আরা বাচ্চু। সেই থেকে এলাকাবাসীর মাঝে আশার আলো দেখা দিলেও তা আজ নিরাশায় পরিণত হয়েছে। লোকবলের অভাবে ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার স্মৃতি যাদুঘর ও গ্রন্থাগার এলাকাবাসীর চাহিদা মেটাতে পারছে না। যাদুঘরে ভাষা শহীদের কোনও স্মৃতিচিহ্ন নেই।