মৌলভীবাজার থেকে আজিজুল ইসলাম: হাওর হাকালুকিতে হিজল-করচের বাগান সৃজনের লক্ষ্যে লক্ষাধিক গাছ রোপণের কাজ শেষ হয়েছে। এর ফলে হাওর এলাকার মানুষ এবং প্রকৃতি ফিরে পাবে অতীত ঐতিহ্য। সৃষ্টি হবে অতিথি পাখি, মাছ আর বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম।

এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকিতে গেলে নতুন সৃজিত হিজল-করচের (করচ পানিতে বেড়ে ওঠতে পারে এমন জাতীয় গাছ) গাছগুলো দ্রুত বেড়ে উঠার দৃশ্য চোখে পড়ে। হাওরের বাইয়া বিল অভয়াশ্রমের পাড়ে ৪১ হাজার ৭৫০, গজুয়া বিল অভয়াশ্রমের পাড়ে ৪০ হাজার, কৈয়ারকোনা বিল অভয়াশ্রমের পাড়ে ১১ হাজার ৪০০ এবং ফোয়ালা বিলের পাড়ে ৯ হাজার ৪০০টি হিজল- করচের চারা লাগানো হয়েছে। এই চারটি বাগানে মোট ১ লাখ ২ হাজার ৫৫০টি হিজল-করচের চারা রোপণের কাজ শেষ হয়েছে। চলছে চারাগুলো বড় করার জন্য পরিচর্যার কাজ। বাগানগুলি তৈরি ও বাস্তবায়নে কাজ করেছে হাল্লা ভিসিজি (ভিলেজ কনজারভেশন গ্রুপ), হাকালুকি জাগরণী ভিসিজি, একতা ভিসিজি ও যুধিষ্টিপুর বাদেদেউল ভিসিজি। এর আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা করছে ইউএসএআইডি।
স্থানীয়রা জানান, হিজল-করচের বাগান রক্ষায় যেসব এলাকায় চারা রোপণ করা হয়েছে, সেই এলাকায় গরু-মহিষের বাথান রাখা হয়নি এবার। ফলে নতুন চারা নির্বিঘ্নে বেড়ে ওঠছে। উন্নয়নকাজে নিয়োজিত বেসকারি সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতা হাওর উন্নয়নে জনচেতনার একটি ইতিবাচক দিক। এটি হাওর এলাকার মানুষের জীবিকায়নে বিশাল ভুমিকা রাখবে।
হিজল-করচের চারা পরিচর্যাকারী মরম আলী, মনু মিয়া, এখলাছ, আব্দুল আজিজ ও বাবুল মিয়া জানালেন, হিজল-করচের বাগান হলে অতিথি পাখি আরও বেশি আসবে। বর্ষাকালে হাওর আর অরক্ষিত থাকবে না। কেউ এই হিজল-করচের বাগানে ক্ষতিকর জাল টেনে মাছ শিকার করতে পারবে না। ফলে আবার হাওরে বড় বড় মাছ হবে।
ক্রেল প্রকল্পের মাঠ কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান জানালেন, এই বাগানগুলি সৃজন করার উদ্দেশ্য হাকালুকি হাওরের পূর্বের পরিবেশ ফিরিয়ে আনা, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব রোধ করা। অতিথি পাখি, মাছ ও বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম হবে এর ফলে। এতে প্রতিবেশ-ব্যবস্থার উন্নতি হবে। এটা বাস্তবায়ন হলে মিঠাপানির মৎস্য প্রজননকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হাকালুকিতে মাছের নিরাপদ বিচরণক্ষেত্র ও প্রজননক্ষেত্র তৈরি হবে।