দিনাজপুর থেকে রতন সিং: দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার পাল্টাপুর ইউনিয়নে তুঁতবাগানের তিন হাজার গাছ কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। যার আনুমানিক মূল্য ৬ লক্ষ টাকা বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে ২৭ জানুয়ারি ১৪ জনকে আসামি করে বীরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের হলেও এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি।
বাংলাদেশ রেশম বোর্ডের বীরগঞ্জ উপজেলা সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কামরুল আহসান জানান, ১৯৮১ সালে বেসরকারি সংস্থা আরডিআরএস বাংলাদেশ রেশম বোর্ডের কাছে বীরগঞ্জ উপজেলায় মোট ৩৯ দশমিক ১১একর জমি হস্তান্তর করে। এরমধ্যে ৩৭ দশমিক ১১একর খাস ও দুই একর কেনা। পাল্টাপুর ইউনিয়নে রেশম বোর্ডের ৮ দশমিক ১৬ একর জমিতে তুঁতবাগান করা হয়েছে। গাছগুলো থেকে বছরে ২০ লাখ টাকার রেশম গুটি বিক্রি হতো। সেই টাকা পেতেন এলাকার গুটিপোকা পালনকারী উপকারভোগীরা। বীরগঞ্জ উপজেলার পাল্টাপুর ইউনিয়নের রাস্তার উত্তর দিকে অবস্থিত এই তুঁতবাগানটি। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পাকা রাস্তার দুই ধারে পাশাপাশি চারটি বাগান আছে। এর মধ্যে রাস্তার উত্তর দিকে একটি ও দক্ষিণ দিকে দুটি বাগানের তুঁতগাছগুলো গোড়া থেকে কেটে ফেলা হয়েছে।
বাগানের নৈশপ্রহরী মোজাম্মেল হক জানান, ২২ জানুয়ারি রাতে আবদুল মোমিনের নেতৃত্বে আনুমানিক ২শ জনের একদল দুর্বৃত্ত চাইনিজ কুড়াল দিয়ে ৩টি বাগানের তিন হাজারের বেশি গাছ কেটে ফেলেছে। এসময় একই উপজেলার সুজালপুর ইউনিয়নের মমতাজ খান, শাকিল খান, নাসিম খান, বকিল খান ও রাসেল খান সহযোগিতা করেন। বিষয়টি দেখতে পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বাগানের ব্যবস্থাপক লুৎফর রহমান ও রেশম বোর্ডের বীরগঞ্জ কার্যালয়ের কর্মকর্তা কামরুল আহসানকে জানানো হয়।
গাছ কাটার কথা স্বীকার করে মমতাজ খান বলেন, ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পর পাকিস্তান সরকার পাল্টাপুর ইউনিয়নে ১০ বিহারি পারিবারকে তিন একর করে মোট ৩০ একর জমি বরাদ্দ দেয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিহারিরা পালিয়ে গেলে জমিগুলো বেদখল হয়ে যায়। এরপর প্রথম আরডিআরএস ও পরে বাংলাদেশ রেশম বোর্ড তাদের কাছ থেকে জমিগুলো নেয়। সেই জমি ফিরে পেতে তারা আদালতে মামলা করেছে। আদালত তিনটি রায় তাদের পক্ষে দিয়েছেন। এরপর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে আবেদন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক দখল ছেড়ে দিতে বললেও রেশম বোর্ড জমি না ছেড়ে দেওয়ায় বাধ্য হয়ে দখল নিতে গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে।
বাংলাদেশ রেশম বোর্ডের বীরগঞ্জ উপজেলা সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কামরুল আহসান বলেন, আদালত থেকে রায় তাঁদের পক্ষে দেওয়া হলেও তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেশম বোর্ডের কাছে আসবে। কিন্তু এ ধরনের কোনো আদেশ তাঁদের কাছে আসেনি।
দিনাজপুর জেলা প্রশাসক আহমদ শামীম আল রাজী বলেন, ওই জমির মালিক জেলা প্রশাসন এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। রেশম বোর্ড ওই জমি পেয়েছে। যারা গাছ কেটেছে, আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বীরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এ এম নাজমুল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।