২৮ বছরে নিষ্পত্তি হয়নি ফকিরহাট কলেজর নামকরণ

বাগেরহাট থেকে বাবুল সরদার: বাগেরহাটে ঐতিহ্যবাহী ‘ফকিরহাট কলেজ’ এর নামকরণ জটিলতায় উন্নয়ন কর্মকান্ড দৃশ্যত: থমকে আছে। ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এ কলেজটির নামকরণ নিয়ে ২৮ বছর ধরে মামলা চলছে। ১৯৮৬ সালে এরশাদ সরকারের সময়ে ফকিরহাটের বাসিন্দা ও তৎকালীন এরশাদ সরকারের স্বরাষ্ট্র ও শিক্ষা সচিব মরহুম কাজী আজাহার আলীর নামে কলেজের নামকরণ করাকে কেন্দ্র করে সংকট শুরু হয়। নি¤œ আদালত থেকে ‘ফকিরহাট কলেজ’ নামকরণের পক্ষে রায় পায় বাদীপক্ষ। তবে উচ্চ আদালতে আপিলের কারণে বিষয়টি এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। সাত বছর ধরে উচ্চ আদালতে নিস্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে মামলাটি। এ অবস্থায় বিঘিœত হচ্ছে কলেজের প্রশাসনিক ও শিক্ষা কার্যক্রম। প্রতিষ্ঠানটির স্বার্থে কলেজ কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসী মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি কামনা করেছেন।

Bagerhat Photo 2 (02.02.2015) 2
বাগেরহাটের ঐতিহ্যবাহী ‘ফকিরহাট কলেজ’

১৯৮৬ সালে কলেজ পরিচালনা কমিটির তৎকালীন সভাপতি ও বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক ফকিরহাট কলেজের নাম পরিবর্তন করে ‘কাজী আজাহার আলী কলেজ’ নামকরণ করেন। নাম পরিবর্তনের সময়ে জেলা প্রশাসক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামকরণ বিষয়ক সরকারি বিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করেননি বলে অভিযোগ রয়েছে।

এই অবস্থায় ‘কাজী আজাহার আলী কলেজ’ নামে প্রতিষ্ঠানটির এই নামকরণকে অবৈধ ও অনিয়মতান্ত্রিক দাবি করে ঐ নামকরণের উপর নিষেধাজ্ঞা এবং নাম বাতিলসহ প্রতিষ্ঠানটির নাম ‘ফকিরহাট কলেজ’ পুণর্বহাল রাখার দাবিতে ১৯৯২ সালে বাগেরহাট আদালতে মামলা করা হয়। কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন কমিটির অন্যতম সদস্য ও বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শেখ আলী আহম্মদ বাদী হয়ে কাজী আজাহার আলী, কলেজ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি, কলেজের অধ্যক্ষসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেছিলেন।

মামলার নথি অনুযায়ী, বাগেরহাট সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের বিচারক ১৯৯৯ সালের ১৮ আগস্ট এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। আদেশে আদালত ফকিরহাট কলেজকে ‘কাজী আজাহার আলী কলেজ’ নামকরণ অবৈধ উল্লেখ করে ডিক্রি দেন এবং এই নামকরণ ও নামকরণকারীদের উপর স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। পরে বিবাদী পক্ষের আর্জি শুনানী শেষে ২০০৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বাগেরহাটের যুগ্ম জেলা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক নি¤œ আদালতের ঐ ডিক্রি ও রায় বহাল রাখেন। কাজী আজাহার আলীর পক্ষে তাঁর আইনজীবী কাজী জাফরুল্লাহ চৌধুরী ঐ রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ২৬ এপ্রিল উচ্চ আদালতে আপিল করেন। বাদী পক্ষের অভিযোগ, পরাজয় নিশ্চিত জেনে বিবাদী পক্ষ আপিলটি নিষ্পত্তি না করে কৌশলে তা উচ্চ আদালতে ফেলে রেখে সময়ক্ষেপণ করছেন।

নি¤œ আদালতের রায় দুটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, মামলার শুনানীকালে আদালত যে বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন তার মধ্যে আছে, নামকরণের আগে সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে অবহিত না করা, সুনির্দিষ্ট এজে-া দিয়ে কলেজ ব্যবস্থাপনা কমিটির নামকরণ বিষয়ক সভা আহ্বান না করা, কমিটির সভায় এ বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হওয়া, বিধি অনুযায়ী নামকরণে আগ্রহী ব্যক্তির পক্ষ থেকে যথাসময়ে নির্দিষ্ট অংকের অর্থ কলেজ তহবিলে জমা না দেয়া প্রভৃতি।

এই মামলার বাদী শেখ আলী আহম্মদ বলেন, ‘বিবাদীরা নিয়ম বহির্ভুতভাবে ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করে অপরাধ করেছিলেন। আদালত বিচার বিশ্লেষণ করে মামলার উপযুক্ত আদেশ দেন। ফলে ‘ফকিরহাট কলেজ’ নামকরণ বহাল রাখতে আমার নালিশী আবেদনটি যথার্থ প্রমাণিত হয়।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা ছিল এরপর এলাকার গুরুত্বপূর্ণ এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি পরিচালনায় বিবাদীরা আর কোন বিঘœ সৃষ্টি করবেন না। কিন্তু বিবাদী পক্ষ সাত বছর ধরে সম্পূর্ণ হয়রাণীমূলকভাবে মামলাটি উচ্চ আদালতে ঝুলিয়ে রেখে সময় নষ্ট করছেন। ফলে কলেজের উন্নয়ন, প্রশাসনিক ও শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে।’

কলেজের অধ্যক্ষ শেখ খায়রুল আলম বলেন, ‘আমরা ‘‘ফকিরহাট কলেজ’’ নামকরণ বহাল রাখতে চেয়েছিলাম। আমরা তা পেয়েছিও। কিন্তু এখন বিবাদী পক্ষ উচ্চ আদালতে উদ্দেশ্যমূলক সময়ক্ষেপণ করছেন। বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়ায় প্রশাসনিক ও দাপ্তরিক যোগাযোগ বিঘিœত হচ্ছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিষ্ঠানের নাম নিয়ে বিব্রত। প্রতিষ্ঠানটির সাথে এলাকার মানুষের মান-সম্মান ও আবেগ জড়িত। এভাবে চললে আমরা সুবিচার থেকে বঞ্চিত হতে পারি। আমরা দ্রুত বিষয়টি নিষ্পত্তি চাই।’

এ বিষয়ে কথা বলতে মরহুম কাজী আজাহার আলীর পরিবারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাঁদের পাওয়া যায়নি।