শেরপুর থেকে এম.সুরুজ্জামান: শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী গারো পাহাড়ের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দয্যের লীলাভূমি ‘গজনী অবকাশ’ পিকনিক স্পটে মানুষের ভিড় নেই। প্রতিবছর শীতের শুরুতেই এই স্পটে পর্যটক ও ভ্রমণপিপাসুদের পদভারে মুখরিত থাকে। এবার রাজনৈতিক অস্থিরতা যেন সব কিছু স্তব্ধ করে দিয়েছে। আগের সেই কোলাহল নেই, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়েছে।
গত বছরও মৌসুমের শুরুতেই ভ্রমণপিপাসুদের পদভারে ছিল মুখরিত। কিন্তুু এবারের দৃশ্যপট একেবারেই ভিন্ন। অবরোধ, হরতালসহ রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাবে এই ভরা মৌসুমেও এখানে নেই পর্যটকদের ভিড়। নেই কোলাহল, দৌড়ঝাঁপ, গাড়ি ছেড়ে যাওয়া, গাড়ি এসে দাঁড়ানো দৃশ্যগুলো।
দূরের পর্যটক আসা বন্ধ হয়ে গেছে। এ জন্য অবকাশ পিকনিক স্পটের ব্যবসায়ীরা দায়ী করছেন দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে। তাদের ব্যবসায় এবার চরম লোকসান গুনতে হবে বলে তারা মন্তব্য করেন। তারা বলেন, দূরের পর্যটকদের আসতে হলে তাদের নিরাপত্তার প্রয়োজন। কিন্তুু অবরোধ আর হরতালের পর হরতাল এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে পর্যটকরা আসতে পারছেন না।
এলাকার উপজাতীয় লোকজন জানান, শীতকালেতো বটেই সবকালেই এখানে বনভোজনে আসা লোজনের পদভারে মুখরিত থাকতো। ক্রমাগত দর্শনার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় লোকসান গুণতে হচ্ছে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। সেই সাথে পিকনিক স্পট এবং এর আশপাশের অসংখ্য ভ্রাম্যমান দোকানীদেরও চলছে চরম দুর্দিন। বন্ধ হয়ে গেছে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য। বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের অতি নিকটে এই অবকাশ পিকনিক স্পট ঝিনাইগাতী গারো পাহাড়ের ঠিক মধ্যস্থলে হওয়ায় চারপাশে উঁচু-নিচু পাহাড়-টিলা, ঝরণা আর সবুজের অপরূপ সমারোহ দেখতে প্রতিদিন ছুটে আসতেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য পর্যটক। আসতো বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, ভটভটি। এছাড়াও টেম্পু ও রিক্সাযোগেও আসতেন অনেকে।
অত্যন্ত মনোরম দৃশ্য আর মনোমুগ্ধকর পরিবেশে গড়ে ওঠা গারো পাহাড়ের ঠিক মধ্যভাগে ‘গজনী অবকাশ পিকনিক স্পট’। গারো পাহাড়ের ঠিক মধ্যভাগে প্রাচীনতম এক বিশাল বটবৃক্ষকে কেন্দ্র করে তৎকালীন সংসদ সদস্য মরহুম. ডাঃ সেরাজুল হক এবং জেলা প্রশাসকের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠে এই মনোমুগ্ধকর ‘অবকাশ পিকনিক স্পট’।
পর্যটকদের জন্য এখানে রয়েছে সাইট ভিউ টাওয়ার, ড্রাগন, ঝুলন্ত ব্রীজ, বিশাল লেক, ময়ুরপঙ্খী নাও, পাহাড়, টিলা, পদ্মসিঁড়ি, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ, শিশুপার্ক, মিনি চিড়িয়াখানাসহ আরো অনেক কিছু।
রয়েছে আকর্ষণীয় আঁকাবাঁকা পদ্মসিঁড়ি, লেকের মাঝখানে কৃত্রিম দ্বীপ, শান বাঁধানো সেই ঐতিহাসিক বিশাল বটবৃক্ষ, লেকের পানির পাশেই শোভা পাচ্ছে শিলা মৎস্য কুমারীর প্রতিকৃতি, লেকের ওপর সুদৃশ্য দ্বিতল রে¯েঁÍারা, রয়েছে প্যাডেল বোট, হাঁস নৌকা, আকর্ষণীয় ঘাটসিল রোলের ওপর নির্মিত দোলখাওয়া ব্রিজ, ট্যানেল পাতালপুরীসহ আরো কতকিছু।
এছাড়াও রয়েছে শিশুপার্ক, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ, অর্কিট হাউস, মিনি চিড়িয়াখানা, বিভিন্ন জীব-জন্তুু-জানুয়ারের প্রতিকৃতি, জলপ্রপাত।
এখানকার গারো-কোঁচ, হাজং, বানাই ইত্যাদি উপজাতীয়দের চাষাবাদ, তাঁত ও কুটির শিল্প, ভাষা, সাহিত্য-সংস্কৃতি, হাসি-কান্নাসহ তাদের জীবনধারাও অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং মনে মনে রাখার মত।
এবার সেই ঐতিহ্যবাহী অবকাশ পিকনিক স্পটে নেই কোন ভির। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে একেবারেই নিরব, নিথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।