বরিশাল থেকে এম.মিরাজ হোসাইন: বরিশালে অতিদরিদ্রের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির প্রায় ২১ কোটি টাকা লুটপাট চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জেলার ১০ উপজেলায় সরকারি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগের নেতারা ৬০ থেকে ৭০ ভাগ কাজের অর্থ ভাগ-বাটোয়ারা করে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে মাঠ পর্যায়ে উন্নয়ন কাজ ৩০ ভাগও হয়নি।
দরিদ্রের শ্রমের টাকা নিয়ে অসংখ্য অনিয়মের অভিযোগ পড়লেও তা ফাইলবন্দি রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, জেলার সবক’টি উপজেলায় এ প্রকল্পের কাজে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতি চলছে। বিভিন্ন উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, অতিদরিদ্রের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির কাজের ৬০ থেকে ৭০ ভাগ অর্থ ভাগ-বাটোয়ারা হচ্ছে। ভাগ-বাটোয়ারার তালিকায় উপজেলা চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ নেতা, ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, ট্যাগ অফিসার, নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সেক্টরের কর্তাব্যক্তিরা রয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বরিশাল ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা প্রকাশচন্দ্র বিশ্বাস জানান, কিছু অনিয়ম হতেই পারে। কিন্তু এর কোনো দৃশ্যমান প্রমাণ নেই।
গত বছর ডিসেম্বরে বরিশাল জেলার ১০ উপজেলায় অতিদরিদ্রের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় মাঠ পর্যায়ে উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় জেলায় ২৫ হাজার ৯২৫ শ্রমিক নিয়োজিত করা হয়। প্রত্যেকের মজুরি ২০০ টাকা করে। সে অনুযায়ী ৪০ দিনে ২০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা মজুরি বাবদ ব্যয় করা হচ্ছে।
অতিদরিদ্রের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির অনিয়ম তুলে ধরে হিজলার বাসিন্দা মনির হোসেন তালুকদার ১৪ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। স্থানীয় ইউনিয়নের চার প্রকল্পের আওতায় তালিকাভুক্ত শ্রমিকরা কেউই এ কাজে নিয়োজিত নন। হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা তানিয়া বলেন, তিনি এখনও অভিযোগপত্রটি পাননি।
গৌরনদী উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে এ কর্মসূচির টাকা ভাগ-বাটোয়ারা হচ্ছে। উপজেলার বার্থি ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা শাজাহান প্যাদা জানান, প্রকল্পে শ্রমিক কমবেশি থাকতে পারে। তবে সবাইকে নিয়েই তো চলতে হয়। মুলাদী উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ও বাবুগঞ্জ নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বাকাহীদ হোসেন জানান, মুলাদীতে কেন শ্রমিকদের টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখা হবে।
তবে বাবুগঞ্জে কাজে কিছুটা গড়মিল রয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন। এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল আলম জানান, এ প্রকল্প আসেই স্থানীয় ক্ষমতাসীনদের মাধ্যমে। যে কারণে কোনো না কোনোভাবে কমিটিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ক্ষমতাসীনরা ঢুকে পড়েন। এ কারণে কিছু অনিয়ম হয়। তিনি বলেন, সরকারের উন্নয়ন ও দরিদ্রদের কর্মসংস্থান যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সে লক্ষ্যে জেলা রাজস্ব সম্মেলনে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।