বরিশাল থেকে এম. মিরাজ হোসাইন: চলমান সহিংসতা ও নাশকতা প্রতিরোধে বরিশাল জেলার ছটি আসনের সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ এলাকায় সন্ত্রাসবিরোধী কমিটির কার্যক্রম তদারকি করলেও প্রতিদিনই ঘটছে নাশকতা ও সহিংস কর্মকাণ্ড। একমাসে বরিশাল জেলায় নাশকতায় প্রাণ হারিয়েছেন আটজন। আহত হয়েছেন ১২ জন। জেলায় এ পর্যন্ত প্রায় ৩০টি পরিবহন পেট্রলবোমা নিক্ষেপে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দূরপাল্লার ও অভ্যন্তরীণ রুটের বাস, ট্রাক ও অন্যান যান।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ ও হরতাল চলছে দেশজুড়ে। প্রতিদিন পরিবহনে পেট্রলবোমা নিক্ষেপে ঘটছে প্রাণহানি। এসব ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একে সন্ত্রাসী কার্যক্রম উল্লেখ করে দেশের প্রতিটি পাড়ায়, মহল্লায় সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি গঠন করে নির্বাচিত এলাকার সাংসদেরকে তা তদারকি করার নির্দেশ দেন। এ কমিটিতে শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, এনজিও কর্মী, এলাকার গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দকে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে বরিশাল সদর আসনের সাংসদ জেবুন্নেসা আফরোজ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশক্রমে আমার নির্বাচিত এলাকায় নিয়মিত অবস্থান করছি এবং দলীয় নেতা কর্মীদের সাথে নিয়ে ইতিমধ্যে ইউনিয়ন পর্যায়েও স্থান-কাল বুঝে ৫/৭ সদস্যর কমিটি গঠন করেছি। কমিটিগুলো প্রশাসন ও জনগণের সাথে নাশকতা নির্মূলে কাজ করছে। এছাড়াও সহিংসতার বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আলোচনা করছি এবং প্রায় প্রতিদিনই নগরীর অশ্বিনী কুমার হল এলাকায় আ. লীগ ও তর অঙ্গ সংগঠনের নেতৃত্বে চলমান সহিংসতার বিরুদ্ধে মানববন্ধনসহ পরিবহন চলাচল নিয়মিত করতে পরিবহন সংগঠনকে সাথে নিয়ে লঞ্চ, বাসে একযোগে হর্ন বাজিয়ে প্রতিবাদ করা হয়েছে।
একইসাথে নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ এ পর্যন্ত ১৫টি মামলায় ৩ শ ১৯ জনকে আসামি করেছে এবং ৭৫ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। চলমান অবরোধ ও হরতালে সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি গঠন করার পরও নগরীর গড়িয়ারপাড়, লাকুটিয়া, নথুল্ল¬াবাদসহ ঢাকা-বরিশাল রুটে প্রতিদিনই হামলার ঘটনা ঘটিয়ে চলছে নাশকতাকারীরা। রাতে সড়কে পেট্রলবোমা নিক্ষেপে গাড়ি পোড়ানো এবং চালক, হেলপার ও যাত্রী আহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। শুধু সড়ক পথ নয়, ঢাকা-বরিশাল নৌপথে সুন্দরবন ও পারাবত লঞ্চে দুর্বৃত্তরা অগ্নিসংযোগ করেছে।
টানা অবরোধে বরিশাল ২-আসন উজিরপুরের শানুহার এলাকায় ভোর রাতে গত মাসে ট্রাকে পেট্রলবোমা নিক্ষেপে হেলপার সোহাগ দগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় এবং চালককে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ রুটে ২/১ দিন পরপরই নাশকতার ঘটনার ব্যাপারে সাংসদ তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, চোরাগোপ্তা হামলা করে রাজনৈতিক দর্শন বাস্তবায়ন করা যায় না। নাশকতার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং ২ ফেব্রুয়ারি সোমবার আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আইনী পেশায় থাকার কারণে নিয়মিত বরিশাল শহরে অবস্থান করতে গিয়ে নির্বাচনী এলাকায় কোনো ধরণের প্রভাব পড়ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সন্ত্রাস বিরোধী যে কমিটি করেছি তার সমন্বয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছি।
এদিকে বরিশাল-৩ আসনের বাবুগঞ্জে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে নাশকতা। ৪ ফেব্রুয়ারি রহমতপুর বিমানবন্দর মোড়ে মন্টু হোটেল সংলগ্ন এলাকায় কাঠ বোঝাই ট্রাকে (ঢাকা মেট্টো-১৬২৬৯৫) পেট্রল দিয়ে আগুন দেয় পিকেটাররা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি করার ব্যাপারে নির্বাচিত এলাকার সাংসদ টিপু সুলতান বলেন, এ কমিটিগুলো জনগণকে সাথে নিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকা-ের বিরুদ্ধে জনমত তৈরির কাজ করছে এবং নাশকতাকারীদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য সহযোগিতা চাওয়া হচ্ছে। তিনি গতকাল বিকেলেও এলাকায় সন্ত্রাস বিরোধী একটি সমাবেশে অতিথি থাকার কথা বলেন।
মহাসড়কে পুলিশ-আনসার সদস্যদের যৌথ নিরাপত্তাবলয়ের মধ্যে বরিশাল-১ আসনের মাহিলারা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় শনিবার ভোর রাতে দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রলবোমায় ট্রাক চালক মো. ইজাজুল, মুন্নু মিয়া, মোতালেব শেখসহ তিন জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশ বিএনপি জামায়াতের ৪ জনকে আটক করে এবং পরের দিন নাশকতা বিরোধী মানববন্ধন করে স্থানীয় আ. লীগ নেতাকর্মীরা। এর আগে গৌরনদীতে ৩ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার গভীর রাতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে সুন্দরদী এলাকায় দুর্বত্তরা একটি লবণ বোঝাই ট্রাকে (ঢাকা মেট্রো-ট১১২৩৪০) পেট্রলবোমা ছুড়লে চালক নিয়ন্ত্রণ হাড়িয়ে উল্টে যায় এবং দগ্ধ হয়ে নুরহোসেন (৩২), ট্রাক চালক জাফর রাঢ়ী (২৬) ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
চলমান সহিংসতার ব্যাপারে বরিশাল-১ আসনের সাংসদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এলাকায় থেকে পরিস্থিতি বেশ জোরালোভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন বলে জানান। অপরদিকে বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসনের সাংসদ পংকজ দেবনাথ বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা নেতাকর্মীরা নিয়মিত নির্বাচনী এলাকায় রয়েছি। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি পাতাারহাট বন্দর তেমাথা এলাকায় সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশ করেছেন। অপরদিকে বরিশালের ৬ আসনের সাংসদ রতœা আমিন গত ২০দিন যাবত এলাকার বাইরে রয়েছেন।