কিশোরগঞ্জ থেকে মোস্তফা কামাল: অবশেষে মেননের খুনি বন্ধু মামুন (২৫) ধরা পড়ায় মূল ঘটনা জানা যায়, অপহরণ নাটক সাজাতে গিয়ে বন্ধুকে খুন করা হয়েছিল। বন্ধুর হাতে নিহত মেনন রায়হানের লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে ভৈরবের রেলের জায়গায় দাফন করেছিল। আদালতের অনুমতি নিয়ে মঙ্গলবার রাতে মেননের লাশ কবর থেকে তুলে বাজিতপুরের পিরিজপুরে গ্রামের বাড়িতে জানাজাশেষে পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হয়েছে বলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাজিতপুর থানার এসআই রকিবুল হোসেন এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন।
বাজিতপুরের মজলিশপুর গ্রামের শিক্ষক রায়হান উদ্দিনের ছেলে কলেজ ছাত্র মেনন রায়হান ও পিরিজপুর মুন্সীকান্দা গ্রামের সামসুদ্দিনের ছেলে মামুন ছিল প্রাইমারি স্কুল জীবনের বন্ধু। কিছুদিন আগে দুই বন্ধু মিলে সাজিয়েছিল অপরহণ নাটক। মেনন জানতো, তার বাবার কাছে নগদ দেড়লাখ টাকা রয়েছে। দুই বন্ধু পরিকল্পনা করে, মুক্তিপণ বাবদ দেড়লাখ টাকা পেলে মেনন নেবে এক লাখ আর মামুনকে দেবে ৫০ হাজার টাকা। পরিকল্পনা অনুসারে ৭ জানুয়ারি দুই বন্ধু চলে যায় ভৈরব রেল স্টেশন এলাকায়। তখন মামুনের মাথায় খেলা করতে থাকে এক ভয়াবহ পাল্টা পরিকল্পনা। মামুন ভাবতে থাকে, ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিপণ আদায় করে বেশিরভাগ টাকাই দিয়ে দিতে হবে মেননকে। পুরো টাকা একা আত্মসাত করার উদ্দেশ্যে ওই দিনই সন্ধ্যার পর কোকাকোলার সঙ্গে ১০টি ঘুমের বড়ি খাইয়ে মেননকে অচেতন করে ঢাকাগামী চলন্ত ট্রেনের নীচে ফেলে হত্যা করা হয়। পরদিন মেননের পরিবারকে মামুন মোবাইলে ফোন করে মুক্তিপণ বাবদ দুই লাখ টাকা দাবি করে।
এদিকে ভৈরব জিআরপি থানার পুলিশ রেলে কাটা মেননের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্ত করিয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে ভৈরবে রেলের জায়াগায় দাফন করে ফেলে। অন্যদিকে মামুনের মুক্তিপণের ফোন পেয়ে এ ঘটনায় মেননের বাবা রায়হানউদ্দিন বাজিতপুর থানায় মামলা করলে অবশেষে গত ৪ ফেব্রুয়ারি ঘাতক মামুন পুলিশের জালে ধরা পড়ে। মামুন পুলিশের কাছে ১৬১ ধারায় এবং আদালতে ১৬৪ ধারায় পুরো ঘটনার বিবরণ দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে। ৫ ফেব্রুয়ারি মেনননের স্বজনরা ভৈরব জিআরপি থানায় গিয়ে সেখানে রক্ষিত মেননের রক্তমাখা জামাকাপড় সনাক্ত করে।
এদিকে মেননের পরিবারের পক্ষ থেকে আদালতের অনুমতি নিয়ে ভৈরব থেকে মেননের লাশ উত্তোলন করে মঙ্গলবার রাতে গ্রামের বাড়িতের নিয়ে জানাজা পড়ে নতুন করে দাফন করা হয়েছে বলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাজিতপুর থানার এসআই রকিবুল হোসেন জানিয়েছেন।