রাজশাহী থেকে কাজী শাহেদ: রাজশাহীর পবা উপজেলার শহিদুল ইসলামের দুই বিঘা জমিই সবকিছু। শীতের সবজি চাষ করে এবার লাভ তো দূরের কথা, পরের ফসল চাষের টাকা জোটানোই মুশকিল। কারণ হরতাল-অবরোধের কারণে পানির দামে বিক্রি করতে হয়েছে ক্ষেতের ফুলকপি।
পানির দামে সবজি। তারপরেও ক্রেতা নেই বাজারে। হরতাল-অবরোধ ঘিরে চলমান সহিংসতায় সময়মতো রাজশাহী অঞ্চল থেকে এসব পণ্য দেশের অন্যত্র পাঠানো যাচ্ছে না। এক মাস ধরে এই পরিস্থিতিতে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির মুখে পড়েছে এ অঞ্চলের কৃষি।
বর্গাচাষি শহিদুল ইসলাম জানান, ফুলকপি ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রির আশা নিয়ে চাষ করেছিলেন। কিন্তু হরতাল-অবরোধের কারণে ৪ থেকে ৫ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। ফলে চাষের খরচই উঠছে না। বড়গাছীর চাষি মাজদার রহমান জানান, টমেটো, ফুলকপি বিক্রি করে কোনো টাকায় ঘরে নিতে পারছেন না। তিনি জানান, আগে প্রতিদিন গড়ে ১৫-২০ ট্রাক সবজি পবা থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় যেতো। এখন ৩-৪টি ট্রাকও আসে না। আসলেও পাইকাররা দাম বেশি দিতে চান না। কারণ হিসাবে তিনি জানান, ট্রাক আগের চেয়ে তিন-চারগুণ বেশি ভাড়া নিচ্ছে। এ জন্য পাইকাররা ১০ টাকা কেজির সবজি ২ থেকে ৩ টাকায় কেনেন।
এবার রাজশাহী অঞ্চলের চাষিরা প্রায় তিন হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে শীতের সবজি চাষ করেছিলেন। হরতাল-অবরোধে পরিবহন ব্যবস্থা পুরোদমে সচল না থাকায় মাঠ থেকে ফসল তুলতে চাচ্ছেন না তারা। তবে মাঠে বেশিদিন সবজি রাখতে না পারায় অনেকে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
কৃষি অধিদফতরের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, রাজশাহী অঞ্চলের চার জেলায় রবিশস্য বাজারজাতকরণ আগের বছরের তুলনায় অনেক কমেছে। গত বছর এ সময় আলুর বাজারজাতকরণের হার ছিল ৪৯ শতাংশ, এবার ২৩ শতাংশ। সরিষা ছিল ৬৮ শতাংশ, এবার ৪৪ শতাংশ। অন্যান্য সবজি ৮১ শতাংশ, এবার ৬৩ শতাংশ।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সাজদার রহমান জানান, বৃষ্টি না হলে আলু কিছুদিন জমিতে রাখা যায়। কিন্তু সবজি বেশিদিন রাখা যায় না। তাই মাঠে না রেখে পঁচে যাওয়ার আগেই চাষিরা ছুটছেন বাজারে। পানির দামে তারা ফুলকপি, টমেটো বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। হরতাল-অবরোধের কারণে বাজারজাতকরণ কমেছে বলেও জানান তিনি।