বাগেরহাট থেকে বাবুল সরদার: দীর্ঘ দশ বছর পর শনিবার বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সন্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সন্মেলনকে সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতির পাশাপাশি চলছে জেলাব্যাপী প্রচার-প্রচারণা। নেতা-কর্মীদের মধ্যেও সৃষ্টি হয়েছে প্রাণ চাঞ্চল্যের। ব্যানার, তোরণ, ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে শহর, সড়ক, মহা-সড়ক। বিভিন্ন পয়েন্টে অসংখ্য তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে।
পদপ্রত্যাশী নেতারা কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত ছোটাছুটি করছেন। চলছে লবিং, বিশাল বহরে মহড়া। তবে এই কাউন্সিলকে ঘিরে তৃণমুলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা দলে নতুন নেতৃত্বের প্রত্যাশায় উজ্জিবিত হয়ে উঠেছেন। কাউন্সিলরদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে যোগ্য শক্তিশালী নতুন নেতৃত্ব আসবে’ নাকি “হাইকমান্ডের সিদ্বান্ত’ বলে কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া হবে- তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। কেউ বলছেন ‘যা আছে, তাই থাকবে।’ আবার কেউ বলছেন,‘আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তৃণমূলের প্রত্যাশায় যোগ্য নেতৃত্ব আসবে।’
বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবনের কোলঘেঁষা পীর খানজাহানের (র:) স্মৃতিধন্য বাগেরহাট আওয়ামী লীগের শক্তঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ইতিমধ্যে জেলার নয়টি উপজেলা ও তিনটি পৌরসভার মধ্যে ৮টি উপজেলা ২টি পৌরসভায় বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় উৎসব মুখর পরিবেশে আওয়ামী লীগের সফল সন্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কেবলমাত্র মোড়েলগঞ্জ উপজেলা ও পৌরসভার সন্মেলন হয়নি।
জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি আলহাজ্জ্ব ডা: মোজাস্মেল হোসেনের বাড়ি এই মোড়েলগঞ্জে। তিনি মোড়েলগঞ্জ-শরণখোলা আসনের সংসদ সদস্য। এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা জানান, দলের জেলা সভাপতির বাড়ি মোড়েলগঞ্জে হওয়ার পরেও এখানে সন্মেলন না হওয়াটা অত্যন্ত দু:খজনক। এখানে গত ৬ বছরে যত সংঘাত বা মামলা হয়েছে, তার অধিকাংশ মামলার পক্ষ/বিপক্ষ আওয়ামী লীগ নেতা-কমী-সমর্থকেরা। আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হওয়ার পরেও কেবলমাত্র অন্ত:কোন্দলের কারনে ’৯১ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে এ আসনটি হাতছাড়া হয়। গত ৩৪ বছর ধরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসা আলহাজ্জ্ব ডা: মোজাম্মেল হোসেন বয়সের ভারে এতটাই অসুস্থ্য যে দীর্ঘদিন ধরে তাকে অন্যের সাহায্য নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।
সর্বশেষ ২০০৫ সালের ৭এপ্রিল বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই কাউন্সিলে পুনরায় সভাপতি নির্বাচিত হন ডা: মোজাম্মেল হোসেন ও প্রথম বারের মত সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন জাসদের সাবেক নেতা শেখ কামরুজ্জামান টুকু। বর্তমান এই কমিটিই প্রায় দশ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছে।
কাউন্সিলরদের দাবির মুখে ভোট হলে দলের শীর্ষ পদে নতুন মুখ আসার সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে রাকসু’র সাবেক ভিপি বাগেরহাট সদর আসনের এমপি ও মৎস্য প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ্যাভোকেট মীর শওকাত আলী বাদশা এগিয়ে থাকবেন বলে মনে করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাকর্মী। তাদের মতে, সুষ্ঠুভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য শীর্ষ দু’পদের একটিতে সদর থেকে যোগ্য নেতৃত্ব থাকা উচিৎ। তবে সাধারণ সম্পাদক পদে তারা এককভাবে কাউকে এগিয়ে রাখেননি।
র্শীষ পদে প্রার্থীতার বিষয়ে বাগেরহাট সদরের এমপি আলহাজ্জ্ব এ্যাড: মীর শওকাত আলী বাদশা বলেন, ১৯৬৯ সালে ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে রাকসুর ভিপি ছিলাম। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। সংগঠন শক্তিশালী ও আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য হাইকমান্ডের যে কোন নির্দেশ তিনি মেনে নিতে প্রস্তুত। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে তৃনমূলের নেতাকর্মীসহ কাউন্সিলরা যদি কোনো দায়িত্ব দেন, তা নিষ্ঠার সাথে পালন করবেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এ অবস্থায় বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ কামরুজ্জামান টুকু জানান, সম্মেলন সফল করতে গত প্রায় এক বছর ধরে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের ৭০২টি ওয়ার্ড কমিটি, ৭৬টি ইউনিয়ন কমিটি ও ১১টি সাংগঠনিক থানা কমিটি পুনর্গঠণ করা হয়েছে। সম্মেলনে মোট কাউন্সিলর থাকছেন ২৯২ জন। সন্মেলন সফল করতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রার্থীতার বিষয়ে তিনি বলেন, এই মুহুর্তে তিনি কোন পদে প্রার্থী হতে চান না। তবে সম্মেলনে তৃনমূল নেতাকর্মীরা তার বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত নেবে তাই তিনি মেনে নেবেন। সেক্ষেত্রে দলীয় নেতা কর্মীরা কোন পদে তাকে বেছে নিবেন তা নেতা কর্মীদেরই বিষয়। তিনি আরও বলেন দলীয় সিদ্ধানের বাইরে তিনি কোনো কিছইু করতে আগ্রহী নন। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘টানা প্রায় ৩৫ বছর জেলা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। জেল খেটেছি, সশস্ত্র হামলার শিকার হয়েছি। জননেত্রী শেখ হাসিনা ও দলীয় কর্মীরা সব সময়ে আমার উপর আস্থা রেখেছেন। তাঁরা চাইলে আমি আবার সভাপতি পদে দায়িত্ব নেবো।’