কুলাউড়ায় চা বাগানগুলোর ছায়াবৃক্ষ নিধন, উৎপাদন হ্রাসের আশঙ্কা

মৌলভীবাজার থেকে আজিজুল ইসলাম: মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বিভিন্ন চা বাগান থেকে ব্যাপকহারে ছায়াবৃক্ষ উজাড় হয়ে যাচ্ছে। কিছু অসাধু কর্মকর্তা, কর্মচারী চা বাগানের বিভিন্ন টিলা থেকে প্রতিনিয়ত ছায়াবৃক্ষ হিসাবে পরিচিত মূল্যবান গাছ-গাছালি সাবাড় করছেন। চাতলাপুর চা বাগান থেকে ট্রলি বোঝাই কাঠ পাচারের সময় শনিবার দুপুরে বিজিবি ৪০ দশমিক ৫৬ ঘনফুট বিভিন্ন প্রজাতির কাঠ আটক করেছে। এভাবে প্রতিনিয়ত ছায়াবৃক্ষ চুরি হওয়ায় চায়ের উৎপাদন কমে যাচ্ছে যার প্রভাব পড়ছে এই শিল্পের উপর। একইসাথে পরিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে।

Image796
চা বাগান থেকে কেটে ফেলা বৃক্ষের খন্ডাংশ

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, ডানকান ব্রাদার্সের চাতলাপুর, শমশেরনগর, আলীনগর ও এর ফাঁড়ি চা বাগান থেকে ব্যাপকহারে ছায়াবৃক্ষ চুরি হচ্ছে। সীমান্তবর্তী চাতলাপুর চা বাগানের সবকটি সেকশন থেকে গাছ কেটে নেয়ার পর সেকশনসমূহ বিরাণ ভূমিতে পরিণত হচ্ছে। বাগানের শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, চাতলাপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপকসহ আরও কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী গাছ চুরির সাথে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত রয়েছেন। চা বাগান থেকে গাছ কেটে বাগানের ট্রাক্টরযোগে পাশ্ববর্তী শমশেরনগর, নসিরগঞ্জ ও পীরেরবাজারে স’মিলে গাছ পাঠানোর পর সেগুলো চেরাই করে বিক্রি করা হয়। এই সব স’মিলসমূহে চাতলাপুর চা বাগানের গাছ বেশি চেরানো হয় বলে তারা জানান। শ্রমিকরা জানান, চাতলাপুর বাগান ব্যবস্থাপক ইতিপূর্বে বাগানের ছড়া থেকে বালু উত্তোলন করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।

বিজিবি সূত্রে জানা যায়, সীমান্তবর্তী চাতলাপুর চা বাগানের সেকশন থেকে গাছ কেটে ট্রলিযোগে পাচারের সময় বিজিবির একটি দল ৭ টুকরোয় ৪০ দশমিক ৫৬ ঘনফুট বিভিন্ন প্রজাতির কাঠ আটক করেন।

এদিকে শমশেরনগর ও এর ফাঁড়ি দেওছড়া, আলীনগর ও এর ফাঁড়ি কামারছড়া, সুনছড়া চা বাগান থেকে অব্যাহতহারে গাছ চুরির ফলে বৃক্ষ শুণ্য হয়ে পড়ছে চা বাগানসমূহ। ছায়াবৃক্ষ কমে যাওয়ায় বিনষ্ট হচ্ছে চা গাছ। এদিকে এনটিসি’র কুরমা, চাম্পারায় চা বাগান থেকে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল চা বাগান ম্যানেজমেন্ট ও শ্রমিকদের জিম্মি করে নিয়মিতহারে গাছ চুরি করে নিচ্ছেন। ডানকান ব্রাদার্স শমশেরনগরের ফাঁড়ি দেওছড়া ডিভিশনের ১৬টি সেকশনের সবকটি সেকশন থেকে গাছ কাটার অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চা বাগানের একজন শ্রমিক সর্দার দেওছড়া ডিভিশনের গত দুই বছরের চিত্র তুলে ধরে বলেন, দিনের বেলা গাছ চুরি হয়ে যাচ্ছে। বাগানের ১৬টি সেকশনের প্রতিটি সেকশন থেকে গত কয়েক বছরে কয়েক সহ¯্রাধিক ছায়াবৃক্ষ চুরি হয়েছে। এভাবে অব্যাহতহারে ছায়াবৃক্ষ চুরির ফলে চায়ের উৎপাদন হ্রাসের আশঙ্কা রয়েছে।

চাতলাপুর চা বাগানের সাবেক পঞ্চায়েত সভাপতি সাধন বাউরী, ইউপি সদস্য সিতারীম বীন জানান, চাতলাপুর চা বাগান, শমশেরনগর, আলীনগর থেকে প্রতি রাতে ট্রাকযোগে গাছ পাচার হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী বলেন, চা বাগানগুলোতে গাছ কাটা বন্ধ না হলে সম্পূর্ণ চা শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। গাছ চুরির বিষয়ে ম্যানেজমেন্ট যথাযথ ভূমিকা না নেয়ায় চুরি বাড়ছে। কিছু সংখ্যক কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বাগানের উর্দ্বতন পর্যায়ে জানানো উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।

বিজিবি চাতলাপুর ক্যাম্পের নায়েক সুবেদার দাইমুল ইসলাম কাঠ আটকের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, চা বাগান এলাকা থেকে আটককৃত কাঠ বোঝাই ট্রলি বিজিবি ক্যাম্পে নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এই এলাকার বিভিন্ন চা বাগান থেকে এভাবেই প্রতিনিয়ত কাঠ চুরি হচ্ছে।

এ ব্যাপারে চাতলাপুর চা বাগান ব্যবস্থাপক ইফতেখার এনাম এর বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি জানান, আপনারা সাংবাদিক, যা ইচ্ছা তা লিখেন। আমার বক্তব্য নিয়ে কি করবেন।