শেরপুর থেকে হাকিম বাবুল: শেরপুরে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে গত কয়েক বছর ধরে নিয়মিত বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসলেও এবার একুশে বইমেলা হচ্ছে না। বইমেলা না হওয়ার সংবাদে স্থানীয় সংস্কৃতি কর্মী ও সৃজনশীল উদ্যোগী মানুষের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় ‘একুশে বইমেলা উদযাপন পরিষদ’ এ বইমেলার আয়োজন করে আসলেও আয়োজকদের অনাগ্রহের কারণেই এবার বইমেলা হচ্ছেনা বলে জানা গেছে। তবে জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের চলমান অবরোধ-হরতাল পরিস্থিতির কারণে লাইব্রেরিগুলো আগ্রহী না হওয়ায় বইমেলা আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছেনা।
স্থানীয় সংস্কৃতি কর্মীরা জানান, প্রায় পাঁচ বছর আগে তখনকার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নাসিরুজ্জামান একুশে ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে শহীদ দারোগ আলী পৌরপার্কে বইমেলার প্রচলন করেছিলেন। এজন্য জেলা প্রশাসককে সভাপতি করে ‘একুশে বইমেলা উদযাপন পরিষদ’ নামে একটি কমিটিও করা হয়। যার সদস্য সচিব করা হয় বেসরকারি সদস্য সংস্কৃতি কর্মী মলয় চাকীকে। স্থানীয় এমপি হুইপ আতিউর রহমান আতিক বইমেলা আয়োজনের জন্য একটি তহবিল করতে আর্থিক প্রতিশ্রুতিও দেন। একুশে ফেব্রুয়ারি সমাপনী রেখে আয়েজন করা হতো এ বইমেলা। বইমেলার অনুষ্ঠানস্থলেই ভাষা সৈনিকদের সংবর্ধনা ও আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে আসছিলো। এজন্য সাংস্কৃতিক দলগুলোরও থাকতো আলাদা প্রস্তুতি। প্রতি বছরই বইমেলায় বই কেনাবেচার পরিমাণ বাড়ছিল বলে স্থানীয় পুস্তক ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। পরবর্তী তিন বছর এই বইমেলা নিয়মিত অনুষ্ঠিত হলেও গত বছর বইমেলার স্থান ও সময় কমিয়ে আনা হয়। তখন থেকেই একটা হতাশা বাড়ছিলো।
সাংবাদিক বিপ্লবী রবি নিয়োগী সভাকক্ষ পরিচালনা পর্ষদ সভাপতি সুমীল মালাকার বলেন, চার বছর ধরে মহান একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে শেরপুরে নিয়মিত এই বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। একুশের বইমেলা নিয়ে স্থানীয় শিক্ষার্থী, শিশু-কিশোর, অভিভাবক এবং বই বিক্রেতাদের মধ্যে দারুণ আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। একুশের বইমেলা শেরপুরে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় পাঠাভ্যাস বৃদ্ধি ছাড়াও সুস্থ্য সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশে সহায়তা করে আসছিল। কিন্তু আকস্মিকভাবে বইমেলা বন্ধ হওয়ার সংবাদ সবাইকে ব্যথিত করেছে। সংস্কৃতি কর্মী তরুণ চক্রবর্তী জানান, গত বছরই জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ইচ্ছায় যখন বইমেলার পরিসর ছোট করে শহীদ দারোগ আলী পৌরপার্ক থেকে জেলা শিল্পকলা একাডেমী চত্বরে আনা হয় এবং মেলার সময়কাল ৫ দিন থেকে তিন দিন করা হয়, তখনি কেউ কেউ বইমেলা বন্ধের এ ধরনের আশংকা প্রকাশ করেছিলেন। অবশেষে সেই আশংকাই বাস্তবে পরিণত হলো। কেউ কেউ বলেন, বর্তমান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাকীর হোসেন নিজে একজন সংস্কৃতিবান ব্যক্তিত্ব। তিনি নিজে লেখক, নজরুল গবেষক। প্রশাসনেও একাধিক কর্মকর্তা লেখালেখির সাথে জড়িত। কিন্তু তারপরও একুশের বইমেলা না হওয়াটা দুর্ভাগ্যজনক।
এ ব্যাপারে একুশে বইমেলা উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব মলয় চাকীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একুশের বইমেলা হচ্ছেনা, শুধু এটুকুই জানি। এর বাইরে আসলে আমি কিছু জানিনা। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের সাথে কথা হয়েছে কিনা কিংবা তিনি দেখা করেছেন কিনা-জানতে চাইলে তিনি বলেন, না এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে আমার কোনো কথা হয়নি। তিনি বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারির প্রস্তুতি সভায়ও আমি আমন্ত্রণ পাইনি।
এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত শেরপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর রাজীব কুমার সরকার বলেন, আমরা বইমেলা আয়োজনের চেষ্টা করেছিলাম। লাইব্রেরিগুলোর সাথে ইনফরমাল বৈঠকও করেছি। কিন্তু তারা বইমেলায় স্টল দিতে রাজী হয়নি। দেশের চলমান হরতাল-অবরোদ, সহিংসতার কারণে লাইব্রেরিগুলো আগ্রহী না হওয়ায় এবার একুশের বইমেলার আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছেনা।
শেরপুরে শিশুদের সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শেরপুরে শিশুদের সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও শিশু একাডেমী যৌথভাবে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। প্রতিযোগিতার মধ্যে ছিলো-শিশুদের চিত্রাংকন, সুন্দর হাতের লেখা আবৃত্তি, রচনা লিখন। ২০ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকালে জেলা শিশু একাডেমী মিলনায়তনে এ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মো. আসলাম খান। এতে শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিশু পৃথক তিনটি গ্রুপে অংশ নেয়। শনিবার বিকেলে একুশে ফেব্রুয়ারির আলোচনা সভায় বিজয়ী শিশুদের পুরস্কৃত করা হবে।