কাউখালী (পিরোজপুর) থেকে রবিউল হাসান রবিন: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবসহ নানা কারণে পিরোজপুরের কাউখালীর গ্রামাঞ্চল থেকে তালগাছ ব্যাপকভাবে কমে পাচ্ছে। ঘুর্ণিঝড়ের পর থেকেই এ মড়ক শুরু হয়েছে। এক বছরে প্রায় শতাধিক তালগাছ মারা গেছে। পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও বন বিভাগের সঙ্গে সংশিষ্টরা তালগাছ মড়কের জন্য প্রধানত জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব ডাইব্যাগ নামক এক ধরনের রোগ ও পুষ্টিহীনতাকে দায়ী করেছেন। তারা জানান, শত সহস্র বছর থেকে প্রাকৃতিকভাবেই তালগাছ সৃষ্টি হয় এবং অনেকেই তালের রস, ফল এবং পাতা দিয়ে পাখা তৈরীর জন্য তালগাছ রোপন করেন।
বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রক্ষার নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও গ্রাম-বাংলা ঐতিহ্যের বাহক নানা উপকারী এই তালগাছ রক্ষার কোনো পদক্ষেপ না থাকায় ক্রমেই তালগাছ বিলিন হতে চলেছে। এক সময় কাউখালীসহ পিরোজপুর জেলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত পল্লীর আনাচে কানাচে এবং সড়ক এবং মহাসড়কের পাশে সারিসারি তালগাছ শোভা পেত। সেই দৃশ্য এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। গ্রামের ঝোপ-জঙ্গলের পাশে দু’একটি তালগাছ দেখা যায়।
আগেরদিনে অপরিচিত মানুষদের বাড়ির নিশানা ঠিক করতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তালগাছের সাহায্য নেওয়া হতো। এমনকি সরকারি-বেসরকারি কাজে নানান দিক নির্দেশনার ক্ষেত্রেও তালগাছের সহায়তা নেওয়া হত।
তালের পিঠা, তালের আঁটির সাঁস, তালকুর, তালের রস সব মানুষের নিকট খুব মজাদার খাবার। তালপাতার বাঁশির সুর, তালপাখার বাতাস গ্রাম বাংলায় প্রচলন ছিল। ক্রমেই তালগাছ হারিয়ে যাওয়ার গ্রামীণ পরিবারগুলোতে নেই সেই তাল পিঠার আতিথেয়তা, নেই জামাই আদর আর কন্যা-বরণ। তাল গাছের এসব ঐতিহ্যের দিক ছাড়াও এই গাছের গুল দিয়ে কাঁচা ও পাকা ঘরের তালার (ছাদ) তীর করা হয়ে থাকে। ঘরের তালায় বাঁশের তীরে চেয়ে তালগাছের তীর অনেক মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী হয়।
উপজেলার জয়কুল গ্রামের বাসিন্দা রুহুল আমিন দুলাল জানান, ২৫বছর আগে তার পিতা কাউখালী-বরিশাল সড়কের জয়কুল গ্রামে সাবেক মন্ত্রী মতিউর রহমানের বাড়ির সামনে থেকে বিড়ালজুড়ি সড়কে শতাধিক তাল গাছ রোপন করেছিলেন। কিন্তু এখন তা প্রভাবশলীরা কেটে নিয়ে যাচ্ছে। বাশুরী গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম জানান, বজ্রপাতের কারণে দিন দিন এর সংখ্যা শেষ হয়ে যাচ্ছে।
তালগাছের অভাবে বাবুই পাখির আবাসস্থল নষ্ট হচ্ছে দীর্ঘ দিন থেকে। ভবিষ্যতে এই পাখি বিলুপ্তি হতে পারে বলে পাখি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তালগাছের এসব উপকার ও মানুষের বহুমুখী কল্যাণের কথা বিবেচনা করে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য তালগাছ বাঁচাতে বন অধিদপ্তরের নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে গ্রামের সাধারণ মানুষ মনে করেন।