শেরপুর থেকে হাকিম বাবুল: শেরপুর জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন আগামীকাল (২৬ ফেব্রুয়ারি) বৃহস্পতিবার। নির্বাচনে এবার নগদ টাকা দিয়ে ভোট না কিনতে মসজিদে গিয়ে কোরআন শরিফে হাত রেখে শপথ করেছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত পৃথক দুই প্যানেলের প্রধান চার প্রার্থী। তাদের এ শপথকে কেন্দ্র করে আইনজীবীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হলেও সুধীবৃন্দের মধ্যে কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে।
জেলা আইনজীবী সমিতি সূত্রে জানা যায়, শেরপুর জেলা আইনজীবী সমিতির ১১ সদস্য বিশিষ্ট কার্যকরী পরিষদের নির্বাচনের জন্য ১৬ ফেব্রুয়ারি দুপুরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত দু’টি প্যানেল থেকে ১১ পদে ২২ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। একই দিন বিকেলে শহরের ঐতিহ্যবাহী মাইসাহেবা জামে মসজিদে গিয়ে ওই মসজিদের ইমামের সামনে পবিত্র কোরআন শরিফে হাত রেখে শপথ করেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি প্রার্থী মোখলেসুর রহমান আকন্দ ও সাধারণ সম্পাদক আবুল মানসুর স্বপন এবং বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য ফোরামের সভাপতি প্রার্থী মো. সিরাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী এমকে মুরাদুজ্জামান।
পবিত্র কোরআন শরিফে হাত রেখে তারা লিখিত শপথ বাক্যে বলেন, ‘ওই নির্বাচনে তারা নিজেরা কিংবা তাদের অনুসারীদের মাধ্যমে টাকা দিয়ে ভোট কিনবেন না এবং হালাল খাবার ব্যতীত অন্য সকল কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবেন।’ বিষয়টি জানাজানি হয়ে পড়লে সাধারণ আইনজীবী ও ভোটারদের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। বিষয়টি সাধারণ আইনজীবীদের মধ্যে ইতিবাচক সূচনা বলে প্রশংসিত হয়। তবে কেউ কেউ এটিকে দায়িত্বশীলদের দায়িত্বহীন কাজ বলেও মন্তব্য করেছেন। ওই অবস্থায় ভোটারদের একটি অংশ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ভোটদান থেকে বিরত থাকতে পারেন বলে আশংকা করা হচ্ছে। এবার নগদ টাকা লেনদেন না হলেও হোটেলে প্রার্থীদের পক্ষ থেকে প্রতিদিন ভুরিভোজের আয়োজন থাকছেই।
এ ব্যাপারে দুই প্যানেলের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা নগদ টাকায় ভোট না কিনতে মসজিদে গিয়ে কোরআন শরীফ ছুঁয়ে শপথ গ্রহণ করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। শেরপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া ভুলু এবং আওয়ামী আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের সহ-সম্পাদক প্রার্থী ফারহানা পারভীন মুন্নী বিষয়টিকে বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে একটি নতুন ধারার সূচনা হতে পারে। এ শপথ করানোর অন্যতম উদ্যোক্তা অ্যাডভোকেট প্রদীপ দে কৃষ্ণ ও আব্দুর রহিম বাদল বলেন, আইনজীবীরা সমাজের অভিজাত শ্রেণী। আমাদের নির্বাচনে টাকার খেলা হবে, সমাজের মানুষজন আমাদের নিয়ে কটু মন্তব্য করবে, এটা হতে পারেনা। তাই এবার নির্বাচনের ট্রাডিশনটাকে পরিবর্তন করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। দুই গুরুত্বপূর্ণ পদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধান চার প্রার্থী এ উদ্যোগে সাড়া দেওয়ায় প্রক্রিয়াটি সহজ হয়েছে। আমরা আইনজীবীরাই পরিবর্তনের সূচনা করতে পারি শেরপুর বারের এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সমাজকে আমরা এ বার্তাই দিতে চাই।
শেরপুর জেলা আইনজীবী সমিতির প্রতিবারের নির্বাচনেই টাকার বিনিময়ে ভোট কেনার বিষয়টি শহরে ব্যাপক আলোচিত হয়ে আসছিল।