ধনবাড়ীতে শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানীর অভিযোগ, বিচারের দাবিতে সমাবেশ

মধুপুর (টাঙ্গাইল) থেকে আব্দুল্লাহ্ আবু এহসান: টাঙ্গাইল ধনবাড়ীর গাড়াখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আজিজুল হকের বিরুদ্ধে প্রাইভেট পড়ানোর নামে যৌন হয়রানীর অভিযোগ করেছেন একই বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর এক ছাত্রী। এ ঘটনার পর ১০ দিন যাবৎ ওই ছাত্রীকে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে হতদরিদ্র পিতা শফিকুল ইসলাম। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার দাবি করে এলাকাবাসী বুধবার বিদ্যালয় মাঠে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে।
যৌন হয়রানীর শিকার মা হারা ওই স্কুল ছাত্রী বুধবার তার বাবার উপস্থিতিতে ঘটনার বিবরণ দিয়ে জানান, গাড়াখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক অজিজুল হকের বাড়িতে গিয়ে তারা ৫ জন শিক্ষার্থী প্রাইভেট পড়ে। ঘটনার দিন গত ২৩ ফের্রুয়ারি সোমবার বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে প্রাইভেট পড়ানো শেষে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের বিদায় করে দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি অংক করে দেওয়ার কথা বলে তাকে আটকিয়ে দেন এবং নানাভাবে উত্যক্ত করেন বলে অভিযোগ করা হয়। এ সময় শিক্ষকের সাথে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে ছাত্রীটি শিক্ষকের হাত থেকে ছুটে দৌঁড়ে পালিয়ে আসে।

মেয়েটির বাবা শফিকুল ইসলাম ঘটনাটি বিদ্যালয়ের প্রাধান শিক্ষক আমির হোসেনের নিকট বলে বিচার প্রার্থনা করেন। ঐ দিন থেকে মেয়েটিকে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেন এবং বিষয়টি পরবর্তীতে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে জানান। কিন্তু প্রাধান শিক্ষক ঘটনাটি চেপে রাখেন বলে অভিযোগ করা হয়। পরবর্তীতে অবস্থা বেগতিক দেখে প্রাধান শিক্ষক ঘটনার এক সপ্তাহ পর বিষয়টি উপজেলা প্রাশাসনকে জানান।

এ ব্যাপারে প্রাধান শিক্ষক আমির হোসেন জানান, তার কাছে অভিযোগ আসলে তা আমলে নিয়ে ভিকটিম ও অভিযুক্ত শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদ করি। জিজ্ঞাসাবাদে ভিকটিম ঐ ছাত্রী তার  গায়ে হাত দিয়ে উত্ত্যক্ত করার কথা তার কাছে বলেছে। অপরদিকে ঐ শিক্ষক মেয়েটিকে শুধুমাত্র শাসন করার কথা বলেছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা তার নেই। এ ব্যাপারে মেয়েটির দরিদ্র পিতা শফিকুল ইসলাম অভিযুক্ত শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক বিচার প্রার্থানা করে বলেন স্যার আমরা গরীর মানুষ। বিচার চাওয়া ছাড়া আমাদের আর কিছু করার নাই। মেয়েকে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করেছেন কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কান্নাকাটি করে বলেন, স্কুলে গেলে মেয়েকে নানা জনে নানা কথা বলে। যার ফলে মেয়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।

এ ব্যাপারে ধনবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শরিফুল ইসলাম জানান, এ ঘটনাটি  বিলম্বে জেনে তদন্ত করার জন্য উপজেলা মধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মনিরুজ্জামানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদন্তে দোষী হলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে শাস্তিরমূলক ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।

মানবাধিকার বাস্তাবায়ন পরিষদ মধুপুর শাখার সভাপতি সার্জেন্ট (অবঃ) গোলাম কিবরিয়া জানান, তদন্তে এ ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে।

এ ব্যাপরে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি মো. নুরুন্নবী, মো. গামা শেখ, গৃহবধূ কল্পলা বেগমসহ এলাকাবাসীর পক্ষে অনেকেই বলেন বেড়ায় ক্ষেত খাইলে কি করার আছে। তবে তারা এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।

এ দিকে এ ঘটনার প্রাতিবাদে এলাকাবাসী বুধবার বিদ্যালয় মাঠে এক প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। সমাবেশে  ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ, যুবলীগ নেতা নুরুননবী, তোফাজ্জল হোসেন, আব্দুল মান্নান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

অপরদিকে এ ঘটনায় আইন শৃংখলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটার আশংকায় এএসপি গোপালপুর সার্কেল আবুল হাসনাত ও ধনবাড়ী থানার ওসি মিজানুর রহমান বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।