কলাপাড়ায় ‘সবুজ সোনা’র ব্যাপক ফলন, অবরোধে লোকশানের আশংকা

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) থেকে মিলন কর্মকার রাজু: ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে কলাপাড়ার শত শত তরমুজ চাষি। এক সপ্তাহ পরই ক্ষেতের এই “সবুজ সোনা” বিক্রি করতে পারবে, তাই ক্ষেতের তরমুজ চুরি ঠেকাতে এখন রাত জেগে পাহারার ব্যবস্থা করছে তারা। ক্ষেতের মাঝখানে ছোট ছোট ঝুঁপড়ি করে তাতে দলবদ্ধভাবে পাহারা বসিয়েছে। ৩/৪ দিনে ক্ষেতের তরমুজ চুরি হওয়ায় এ ব্যবস্থা করেছে কৃষকরা। তবে হরতাল-অবরোধের কারণে মোকামে তরমুজ পাঠাতে না পারার আশংকা করছে কৃষকরা। ফলে ফলন ভাল হলেও এতে তারা লোকশানের মুখে পড়তে পারে।

KALAPARA  TARMUJ KHET-1
চোর ঠেকাতে ক্ষেতের মাঝখানে ছোট ছোট ঝুঁপড়ি করে পাহারা বসিয়েছে চাষিরা

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ধুলাসার, ধানখালী ও চম্পাপুর ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে শুধুই তরমুজের ক্ষেত। ২/৩ কেজি সাইজের এই তরমুজ আর এক সপ্তাহ পরই বিক্রি করতে পারবে কৃষক। কিন্তু তাদের এখন সমস্যা চোর। ধুলাসারের কৃষক আনোয়ার হোসেন জানায়, ৩/৪ দিনে প্রায় ৪/৫’শ তরমুজ চুরি হয়ে গেছে। রাতের আধাঁরে একদল চোর ট্রলারে করে এসে এসব তরমুজ চুরি করে নিয়ে গেছে। এছাড়া রাতে বিভিন্ন ধরনের জীবজন্তু ক্ষেতে ঢুকে তরমুজ নষ্ট করে দিচ্ছে। তাই তরমুজ চুরি ঠেকাতে তারা এখন রাত জেড়ে পাহারা দিচ্ছেন।

চম্পাপুরের কৃষক আলামিন জানায়, এবার শিলা বৃষ্টিতে ক্ষেতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সেই ক্ষতি তারা  পুষিয়ে উঠতে পারলেও এখন সমস্যা চোর। কৃষক সবুজ তালুকদার জানায়, তিনি তিন কেজি ওজনের প্রায় সাতশ তরমুজ বিক্রি করেছেন। প্রতি’শ তরমুজ বিক্রি করেছেন ১৯’শ টাকায়। এখন ক্ষেতের তরমুজ ৪/৫ কেজি  আকারের হয়েছে। আর এক সপ্তাহের মধ্যেই বিক্রি করতে পারবেন, যদি চুরি কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগে নষ্ট না হয়।

ধানখালী ও চম্পাপুরের একাধিক কৃষক জানান, বর্তমানে তাদের প্রধান সমস্যা পরিবহন। কেননা হরতাল ও অবরোধের কারনে এবার ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরের ক্রেতারা তরমুজ কিনতে সাহস পাচ্ছেন না। তার উপর চোরের সমস্যা। তাই এবার মনে হয় তরমুজ নিয়ে তাদের বিপাকে পড়তে হবে। কেননা আর এক সপ্তাহের মধ্যে অন্তত ৬০/৭০ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রির উপযোগী হবে। যদি ক্রেতা না থাকে তাহলে ক্ষেতেই তা পঁচে যাবে।

তরমুজ ব্যবসায়ী সোহল মিয়া, এমদাদ হোসেন, জাফর গাজী জানান, তারা গত বছর প্রায় এক কোটি টাকার তরমুজ ক্রয় করেছেন। কিন্তু এবার মোকামে তরমুজ পাঠাতে ভয় হচ্ছে। তাই এবার হিসাব করে তরমুজ কিনতে হবে। আর এবার পরিবহন ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় উচ্চ মূল্যে তরমুজ বিক্রি হবে বলে তারা জানান।

কলাপাড়া কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, কলাপাড়ার ধানখালী, চম্পাপুর, লতাচাপলী ও লালুয়া ইউনিয়নে প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে এবার তরমুজ চাষাবাদ হয়েছে।

কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান জানান, এবার শিলা বৃষ্টি হলেও তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। তবে সাইজ কিছুটা ছোট হয়েছে।