ঈশ্বরদী (পাবনা) থেকে স্বপন কুমার কুন্ডু: বর্তমান সরকারের আমলে পশ্চিমাঞ্চল রেলে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলছে, যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন সেকসনের পুনর্বাসন, মিটারগেজ থেকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর, নতুন নতুন রেল লাইন নির্মাণ, ব্রডগেজ ইঞ্জিন ও কোচ আমদানি, যাত্রীবাহী কোচ পুনর্বাসন এবং রিলিফ ট্রেন আমদানি। এতে মোট খরচ হচ্ছে ১২ হাজার ৮শ’ ৮০ কোটি টাকা। ফলে এ অঞ্চলের রেল বিভাগে সেবার মান অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। পশ্চিমাঞ্চল রেলের পাকশী বিভাগীয় বণিজ্যিক কর্মকর্তা সুজিত কুমার বিশ্বাসসহ রেলের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এ সব তথ্য জানিয়েছেন।
পশ্চিমাঞ্চল রেলের পাকশী ও লালমনিরহাট বিভাগে ২৫৩ দশমিক ৮ কি.মি. রেললাইন, ৪৪টি স্টেশন, ৪৫১টি ব্রিজ নির্মাণের জন্য ৭ হাজার ৫৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এর মধ্যে ঈশ্বরদী থেকে পাবনা হয়ে ঢালার চর পর্যন্ত ৭৮ দশমিক ৮ কি.মি. নতুন রেললাইন নির্মাণের কাজ চলমানসহ ১ হাজার ৪’শ ৬৬ কোটি টাকায় ১১টি নতুন স্টেশন ও ১১৭টি ব্রিজ নির্মাণের কাজ চলছে। খুলনা হতে মংলাপোর্ট পর্যন্ত ৬৫ কি.মি. নতুন রেললাইন নির্মাণ এবং ৮টি স্টেশন ও ১’শ ৪৫টি ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৫’শ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। কাশিয়ানি-গোপালগঞ্জ, টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত ৫৫ কি.মি নতুন রেললাইন নির্মাণ এবং কালুখালি ভাটিয়াপাড়া সেকসনের ৮২ কি.মি পুর্নবাসন কাজ মিলে মোট ১’শ ৩৭ কি.মি মধ্যে ১৪টি স্টেশন ও ১২০টি ব্রিজ নির্মাণের কাজ চলছে। যার ব্যয় ১ হাজার ৮’শ কোটি টাকা।
আমনুড়া-রহনপুর সেকসনের ৮৫ কি.মি রেললাইনের পুনর্বাসন কাজ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯টি স্টেশন ও ৩২টি ব্রিজও নির্মাণের কাজ রয়েছে। যার ব্যয় হয়েছে ১’শ ৫২ কোটি টাকা। পাঁচুরিয়া-ফরিদপুর-ভাঙ্গা সেকসনের ৫৫ কি.মি রেললাইন, ১১টি স্টেশন ও ৬৯টি ব্রিজ নির্মাণ কাজ অব্যাহত রয়েছে। এতে বরাদ্দকৃত ব্যয় ২’শ ৯২ কোটি টাকা। পার্বতীপুর-কাঞ্চন-পঞ্চগড় ও কাঞ্চন-বিড়ল সেকসনের ১’শ ৬৩ কি.মি মিটারগেজ রেললাইনে ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ এবং বিড়ল বর্ডার সেকসনকে মিটারগেজ হতে ব্রডগেজে রূপান্তর প্রকল্পের কাজ চলছে। এই সেকসনে ১৪টি স্টেশন ও ১’শ ৩৯টি ব্রিজও নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব কাজে মোট ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। সৈয়দপুর থেকে চিলাহাটি সেকসনের ৫২ কি.মি রেললাইন পুনর্বাসন কাজ, ৯টি স্টেশন ও ১৪টি ব্রিজ নির্মাণে বরাদ্দকৃত ব্যয় ১’শ ৮৫ কোটি টাকা। লালমনিরহাট-বুড়িমারী সেকসনে ৯৫ কি.মি রেললাইন পুনর্বাসন কাজ, ৭টি স্টেশন ও ১৪টি ব্রিজ নির্মাণ কাজের মোট ব্যয় ১’শ ৭৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা।
পশ্চিমাঞ্চল রেলের মেকানিক্যাল বিভাগেও ২ হাজার ৪’শ ৪৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে উন্নয়ন কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৮’শ ৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ২৬টি ব্রডগেজ ইঞ্জিন ইতিমধ্যেই আমদানি করা হয়েছে। ৮’শ ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৭০টি ব্রডগেজ কোচ আমদানি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ২০১৬ সালের জুন মাসের মধ্যে ৮৫টি এবং বাকি কোচগুলো পাওয়া যাবে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে। ৬’শ ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৪০টি যাত্রীবাহী কোচ পুনর্বাসন করা হয়েছে এবং ১’শ ১৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১টি মিটারগেজ ও একটি ব্রডগেজ (উদ্ধারকারী) রিলিফ ট্রেন আমদানি করা হয়েছে।
রেলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে এবং রেলওয়েতে যাত্রী সেবার মান শতভাগে উন্নীত করতে পশ্চিমাঞ্চল রেলের বিভিন্ন বিভাগে বন্ধ হওয়া প্রায় ৭৬টি স্টেশন চালু করা দরকার। সেইসাথে জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল নিয়োগ এবং বিভিন্ন সিগন্যাল লাইনসহ ঈশ্বরদী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত ডাবল লাইন নির্মাণ কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন প্রয়োজন। চুক্তিভিত্তিক অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী নিয়োগদান বন্ধ করে ওইসব পদে নতুন লোক নিয়োগদান করলে রেলের ব্যয় সংকোচন হবে বলে উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সৈয়দপুর কারখানাকে সচল করার কাজ হাতে নেওয়া প্রয়োজন বলে তারা মনে করেন। এতে করে শতভাগ যন্ত্রপাতি ও কোচ নির্মাণ এবং পুনর্বাসন কাজ সহজেই করা সম্ভব। একই সাথে রেলওয়ের এসব উন্নয়ন কাজের সাথে কোনভাবেই দুর্নীতিপরায়ন কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী সম্পৃক্ত হতে না পারে সে ব্যাপারে কঠোর দৃষ্টি রাখার জন্য গোয়েন্দা সংস্থা নিয়োগদান করা প্রয়োজন বলে রেলওয়ের সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দাবি জানিয়েছেন।