সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা কমার আশঙ্কা

বাগেরহাট থেকে বাবুল সরদার: রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সুন্দরবনে এবার বাঘের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক কমার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। চলতি বছরের মার্চ মাস শেষে ‘ক্যামেরা ট্র্যাপ’ পদ্ধতিতে বাঘের ছবি সংগ্রহের জরিপ কাজ শেষ হবে। এরপর জুন মাসে এই জরিপের ফলাফল ঘোষণা করা হবে। তখনই সুন্দরবনে বাংলাদেশ অংশে প্রকৃত বাঘের সংখ্যা জানা যাবে।

এই আধুনিক পদ্ধতিতে বাঘ গণনা জরিপে অংশ গ্রহণকারী বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন বাঘের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেকাংশে কমে আসবে। ‘পায়ের ছাপ’ পদ্ধতিতে বাংলাদেশ অংশে যখন বাঘ ছিল ৪৪০ টি, তখন ভারত অংশে দেখা গেছে ২৭০ টি। আর ‘ক্যামেরা ট্র্যাপ’ পদ্ধতিতে এখন ৭৬-টি পাওয়া গেছে ভারতের সুন্দরবন অংশে। সে হিসেবে বাংলাদেশেও বাঘের সংখ্যা কমে আসার আশংকা খুব বেশি। শুধু গণনার প্রদ্ধতিগত কারণে নয়, প্রতিনিয়ত বাঘ হত্যার পাশপাপাশি বাসস্থান ধ্বংস, খাদ্য সংকট, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানামুখী প্রতিকূলতার কারণেও বাঘের সংখ্যা কমছে বলে তাঁদের ধারণা।

বিশ্বের বনাঞ্চলগুলোতে গত ১’শ বছরে বাঘের সংখ্যা এক লাখ থেকে কমতে কমতে চার হাজারের নিচে নেমে এসেছে। বর্তমানে মাত্র ১৩টি দেশে বাঘের অস্তিত্ব রয়েছে। বাংলাদেশ এর মধ্যে অন্যতম উল্লেখ করে বণ্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণের খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. জাহিদুল কবির বলেন, ২০০৪ সালে বাঘের ‘পায়ের ছাপ’ হিসেবে গণনাটির কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি না থাকায় ওই জরিপটি পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্য মনে করা হয়নি। পরবর্তীতে ভারত ‘ক্যামেরা ট্র্যাপ’ পদ্ধতিতে তাদের সুন্দরবন অংশে বাঘ গণনা শুরু করে।

মো. জাহিদুল কবির আরও জানান, বাঘ গণনায় ব্যবহার করা হচ্ছে বিশেষ ধরনের ক্যামেরা। যা বাঘের চলাচল এলাকা সনাক্ত করে গোপনে গাছে লাগিয়ে রাখা হয়। ক্যামেরার সামনে যা কিছুই নড়াচড়া করবে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে তারই ছবি ধারণ করবে। ভারতে যে বিশেষজ্ঞরা গণনা করেছেন, বাংলাদেশেও গণনায় তাঁরা সহযোগিতা করছেন।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও সুন্দরবন রিচার্স সেন্টারের চেয়ারম্যান সরদার সফিউল আলম বলেন, শুমারীর পদ্ধতিগত কারণেই শুধু নয়, প্রতিনিয়ত বাঘ হত্যার কারণেও বাঘের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তবে ‘পায়ের ছাপ’ পদ্ধতির চেয়ে ‘ক্যামেরা ট্র্যাপ’ প্রদ্ধতির  বৈজ্ঞানিক ভিত্তি অনেক বেশি। তিনি বলেন, বাঘ এখন বিলুপ্ত প্রায় প্রাণী। এখনই বাঘ রক্ষায় কার্যকর ভুমিকা নেওয়া না হলে সুন্দরবনের বাঘ বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

শরণখোলার সাউথখালি ইউনিয়নের কয়েকজন বনজীবী বলেন, সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় আগে বাঘ দেখা গেলেও এখন তেমন একটা দেখা যায় না। তারা বলেন, বনদস্যুরাও এখন বাঘ হত্যা করছে। বনদস্যুদের সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়ার কথা বন কর্মকর্তা জাহিদুল কবিরও স্বীকার করেছেন।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী জানান, ২০০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত পূর্ব সুন্দরবন এলাকায় চোরা শিকারীদের হত্যা করা ৯টি বাঘের চামড়া উদ্ধার করা হয়েছে। বন থেকে পাচার হয়ে যাওয়া বাঘের হিসেব পাওয়া যাচ্ছে না। চোরা শিকারীদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়াগুলোর হিসেব রাখা হচ্ছে। তবে বাঘ হত্যার ঘটনা যথেষ্ট উদ্বেগের বিষয় বলে মনে করেন তিনি।