বাগেরহাট থেকে বাবুল সরদার: বাগেরহাটের মংলা বন্দরের শিল্প এলাকায় সেনাকল্যাণ সংস্থার এ্যালিফ্যান্ট ব্যান্ডের মংলা সিমেন্ট ফ্যাক্টরির নির্মাণাধীন ৫ তলা ভবনের ছাদ ধসের ঘটনায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৬ জন শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৩ জনের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন, বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার আলামিন, আমির আকঞ্জি ও মাহফুজ হাওলাদার। আহত অবস্থায় জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ৩৪ জনকে। আহতদের দ্রুত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মংলা বন্দর হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিৎকিসার জন্য পাঠানো হয়েছে। মংলা বন্দর হাসপাতাল থেকে ১২ জনকে আশংকাজনক অবস্থয় খুলনায় পাঠনো হয়েছে বলে জানান মংলা বন্দর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. এনামুল কবির।
ফায়ার সার্ভিসের খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. মিজানুর রহমান জানান, এখনও ২৫ থেকে ৩০ জন নির্মাণ শ্রমিক নিহত বা আহতাবস্থায় ধসে পড়া ভবনের নিচে চাপা পড়ে রয়েছে। উদ্ধার অভিযান শেষ করতে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সময় লাগতে পারে বলে তিনি জানান। ভবনের ছাদ ধসের পর থেকেই মংলার নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, বাগেরহাট-মংলার ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রেখেছে। বিকেলে উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছে সেনাবাহিনীর একটি দল। দুর্ঘটনার পর পরই পুলিশ ও র্যাব গোটা এলাকা ঘিরে রাখে। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত দুর্ঘটনাস্থলে গণমাধ্যম কর্মীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
মংলা সিমেন্ট ফ্যাক্টরির ডেপুটি ম্যানেজার ক্যাপ্টেন সৈয়দ হেলাল হোসেন সাংবাদিকদের জানান, এই নির্মাণাধীন ভবনের ছাদের কাজে প্রায় একশ’ শ্রমিক কাজ করছিল। তবে কি কারনে ছাদ ধসের ঘটনা ঘটেছে সে বিষয়ে সেনা কল্যাণ সংস্থার পক্ষ থেকে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এদিকে খবর পেয়ে দ্রুত দুর্ঘটনাস্থলে ছুটে আসা স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবেক ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী তালুকদার আব্দুল খালেক বিকেলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন, সেনা কল্যাণ সংস্থার নি¤œমানের নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবহার ও তদারকির অভাবে ভয়াবহ এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। নিহত ও আহত নির্মাণ শ্রমিকদের দায়ভার সেনা কল্যাণ সংস্থাকে নিতে হবে বলে তিনি জানান।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে মংলা সিমেন্ট ফ্যাক্টরির ৫ তলা ভবনের ৩ নং বল রুমের ছাদ নির্মাণাধীন অবস্থায় আকস্মিকভাবে ধসে পড়ার ঘটনা ঘটে। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া কয়েকজন নির্মাণ শ্রমিক দাবি করেছেন, এসময় প্রায় দেড়শ’ শ্রমিক ওই নির্মাণ কাজে নিয়োজিত ছিল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছাদ ধসে পড়ে। খবর পেয়ে মংলা নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। এদিকে এই ভবন ধসের পরপরই এই ফ্যাক্টরির প্রধান ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ভবনের ছাদ ধসের খবর মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে নিহত ও আহত শ্রমিকদের স্বজনেরা ফ্যাক্টরির সামনে এসে আহাজারি করতে থাকে। ছুটতে থাকে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে। সন্ধায় এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত কয়েক শ’ নারী-পুরুষ ও শিশু উদ্বিগ্ন অবস্থায় তাদের স্বজনদের অপেক্ষায় মংলা সিমেন্ট ফ্যাক্টরির প্রধান ফটকের বাইরে অপেক্ষা করছিল। এম্বুলেন্সে করে আহত বা নিহত নির্মাণ শ্রমিকদের ফ্যাক্টরির প্রধান ফটক দিয়ে বের করার সাথে সাথেই তাদের কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।
মংলা ইপিজেডের কাছে ‘মংলা সিমেন্ট ফ্যাক্টরি’ নামের কারখানার ওই ধসে পড়া ভবনের নিচে এখনও বহু শ্রমিক আটকা পড়ে আছেন বলে মংলার সংশ্লিষ্ট বুড়িডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অনির্বান হালদার জানান। তার মতে আরও চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ জন শ্রমিক চাপা পড়ে আছে। তাদের উদ্ধারে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১টার দিকে ভবনটির চার তলার নির্মাণ কাজ চলার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। দেড় শতাধিক শ্রমিক সেখানে কাজ করছিলেন। তখন ঘটনাস্থলে চার জন এবং হাসপাতালে আরও অন্তত: চার জন মারা যান বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বাগেরহাটের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. শাহ আলম সরদার ঘটনাস্থল থেকে সন্ধায় জানান, দুর্ঘটনাস্থল থেকে এ পর্যন্ত নিহত ও আহত ৪০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে উদ্ধার কাজে নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনীর কর্মীরা তাদের উদ্ধার কাজ অব্যাহত রেখেছে।