বরিশাল থেকে এম.মিরাজ হোসাইন: বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদীর প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকা দখল করে নদীর মধ্যে বাঁশের বেড়া ও জাল দিয়ে আটকে নৌ-চলাচল বন্ধ করে মাছ চাষ করা হচ্ছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এলাকাবাসী। মাছ চাষের প্রতিবাদ করায় সম্প্রতি একাধিক গ্রামবাসীকে মারধর করে গুরুতর আহত করা হয়েছে।
এলাকাবাসী নদীর বাঁধ অপসারণের জন্য প্রায় প্রতিদিন নানা কর্মসূচি পালন ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। তা সত্বেও প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা বা নদীর বাঁধ অপসারণ না করায় ভুক্তভোগীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, উপজেলার বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ইউনিয়নের আড়িয়াল খাঁ নদীর জাহাপুর ও কেদারপুর ইউনিয়নের প্রায় দেড় কিলোমিটার অংশে বাঁশ ও জালের আড়াআড়ি বেড়া দিয়ে মূল নদী আটকে এক মাস আগে মাছ চাষ শুরু করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান সরদার খালেদ হোসেন স্বপন এবং তার সহযোগীরা। এতে নদীতে সব ধরনের নৌ-চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পরেছেন সিলন্দিয়া, চরজাহাপুর, ঠাকুরমলি¬ক, চরফতেপুর, চরহোগলপাতিয়া, ইসলামপুর, নতুনচর, কিসমৎ ঠাকুরমলি¬ক (টেংরাখালি) ও ভূতেরদিয়া গ্রামের ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষেরা। একই কারণে ওইসব এলাকার শাখা খালে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কৃষি উৎপাদন, পণ্য পরিবহন ব্যহত হওয়ার পাশাপাশি নদী পথে সকল প্রকার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
রবিবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, কেদারপুর ইউনিয়নের চরফতেপুর এলাকায় আড়িয়াল খাঁর প্রায় তিন’শ মিটার চওড়া নদীতে অসংখ্য মোটা বাঁশ পুঁতে ও জাল দিয়ে আটকে পুরো নদী দখল করে মাছ চাষ করা হয়েছে। মাছ চাষের দেখভালের দায়িত্বে থাকা এনায়েত আকন বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান ও আমরা কয়েকজনে মিলে এখানে মাছ চাষ করেছি। সিলন্দিয়া বাজারের ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা নদীপথে নৌকায় পণ্য পরিবহন করতাম। এখন নদী আটকে (দখল করে) মাছ চাষ শুরু করায় আমাদের চরম ভোগান্তি বেড়ে গেছে। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক ওই বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, ক্ষমতার দাপটে সরদার খালেদ হোসেন স্বপন নদী দখল করে মাছ চাষ শুরু করেছেন। উপজেলার কিসমত ঠাকুরমলি¬ক গ্রামের মোতাহার মোল¬া বলেন, আগে এই নদী দিয়া লঞ্চে আইতাম-যাইতাম। অ্যাহন নৌকা-ট্রলার কিছুই চলে না। দুই বছর আগে সাবেক সাংসদ গোলাম কিবরিয়া টিপু নদীর জাহাপুর অংশে সেতুর পরিবর্তে বাঁধ দেয়ার কারণে নদীর প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
বর্তমানে উপজেলা চেয়ারম্যান মাছ চাষের নামে বাকি অংশও আটকে দিয়েছেন। চরফতেপুর গ্রামের রেজাউল হাওলাদার বলেন, এ নদীপথে শিকারপুর থেকে মুলাদী পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল করত। এখন মাঝপথের কেদারপুর থেকে জাহাপুর পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটারে বেড়া দেওয়া হয়েছে। যে কারণে নদীপথ বন্ধ হয়ে গেছে।
ভূক্তভোগী জহিরুল ইসলাম, আমিনুল হক, সাইফুর রহমানসহ একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, উপজেলা চেয়ারম্যানের গায়ের জোরে নদী দখল করে মাছ চাষের প্রতিবাদ করায় চেয়ারম্যানের সহযোগীরা ২৮ ফেব্রুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়ন ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক লুৎফুল কবির সবুজসহ ১০ গ্রামবাসীকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। ওই সময় আগরপুর বাজারে ইউনিয়ন ওয়ার্কার্স পার্টির দলীয় কার্যালয়েও হামলা চালিয়ে ভাংচুর করা হয়। অভিযোগে আরও জানা গেছে, অনতিবিলম্বে জনগুরুতপূর্ণ নদী দখলমুক্ত করার জন্য প্রায় দু’শতাধিক গ্রামবাসীর স্বাক্ষরিত একটি লিখিত আবেদন স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী, জেলা মৎস্য অফিসার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালকের কাছে জমা দেওয়া সত্বেও রহস্যজনক কারণে কোনও প্রতিকার মেলেনি। ইতোমধ্যে ভুক্তভোগীরা নদী দখলমুক্ত করার দাবিতে বাঁধ এলাকায় মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ ও পদযাত্রা কর্মসূিচ পালন করেছেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সরদার খালেদ হোসেন স্বপন বলেন, এক সময় এ নদী দিয়ে ছোট লঞ্চ চলাচল করলেও এখন ওই নদীতে কিছুই চলে না। তাই ওই নদীর এক কিলোমিটার জায়গায় বাঁশ ও জাল দিয়ে আটকিয়ে গ্রামের ১৭১জন ব্যক্তিকে নিয়ে সমিতির মাধ্যমে মাছ চাষ করা হয়েছে।
বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বাকাহিদ হোসেন বলেন, নদীতে বাঁশের বেড়া দিয়ে মাছ চাষ করার কোনও অনুমতি দেওয়ার সুযোগ নেই। তিনি আরও বলেন, গ্রামবাসীদের লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে ইতোমধ্যে প্রতিবেদন জেলায় পাঠানো হয়েছে।